শুধু বায়ু দূষণ ও যানজটের পাশাপাশি চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের উৎপাতে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য এক নগরীতে পরিণত হয়েছে। বায়ু দূষণে ইতোমধ্যেই ঢাকার নাম শীর্ষে উঠে এসেছে। এই দূষিত বাতাস ও আওয়ামী উৎপাতে মানুষের জীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হয়ে সুস্থ ও জীবন নিয়ে ঘরে ফিরতে পাবে কি না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। এমনকি, নিজ দলের গুণ্ডাদের ভয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরাও এখন নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। দিনে দুপুরে খুন, ছিনতাই যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, গত ২৪শে মার্চ দলীয় কোন্দলে রাজধানীতে প্রকাশ্যে খুন হয়েছেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (৪৫)। সন্ত্রাসীদের গুলিতে এসময় নিহত হন সামিয়া আফরিন প্রীতি (১৮) নামের এক পথচারী।
গত এক যুগে আওয়ামী লীগ সারা দেশে মাফিয়াতন্ত্রের অত্যাচারে মানুষ অতীষ্ঠ। তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ারের বয়ান দিচ্ছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা। অথচ, ঢাকাকে পরিত্যক্ত এক দূষিত নগরীর শীর্ষে স্থান দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার বাতাসের ‘বিষে’ মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিটি নি:শ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করছে দূষিত অক্সিজেন। এই দূষিত বাতাসের ফলে নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ঢাকাবাসী।
বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা। ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নগরীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। চরম বেকারত্বের কারণে দিনদিন ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ বাড়ছেই। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে চলছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। হরেক রকমে প্রকল্পের নামে রাজধানীকে জঞ্জালের নগরীতে পরিণত করেছেন তারা। কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ধুলা-বালিতে অন্ধকার থাকে ঢাকার বাতাস।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। এদিকে, জানুয়ারি মাসে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) থেকে জানা গেছে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।
তবে এবারই প্রথম নয়, আগের বছরগুলোর সমীক্ষার ফলাফলেও ঢাকার এমন করুণ চিত্র উঠে এসেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনবসতি আর অপরিকল্পিত নগরায়নের পাশাপাশি বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ঢাকায় স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের বিপর্যয় বেড়েছে। লুটপাট করে অপরিকল্পিতভাবে রাজধানীতে অবকাঠামো নির্মাণ করতে ব্যস্ত সরকার। কেউ কারো কাছে এখন ঠিকঠাক জবাবদিহি করে না। ফলে শহরটি এখন জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে। এর বাতাসেও এখন যেন ‘বিষ’।
আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শিল্পকারখানাসহ ছোট বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গায়, অপরিকল্পিতভাবে। মানুষ সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা, যানবাহনের সংকট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভয়াবহ যানজট, পয়-নিষ্কাশনের করুণ অবস্থা, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাটের করুণ দশা। এসবের মাঝেই বসবাস করতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ৫ গুণ বেড়েছে। ঢাকা শহরের চারপাশে সাড়ে ৫ হাজার ইটভাটা আছে। যেগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে কার্বন। এই কার্বনের প্রভাব পড়ে সরাসরি রাজধানীর উপর। এতে রাজধানীবাসী নানা রোগে অসুস্থ হচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুর কারণে নানান স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের ৩টি প্রধান উৎস হল, ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। দীর্ঘদিন দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার ফলে একজন ব্যক্তির হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন