মার্কেটের মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন এক ঠিকাদার। ঠিকাদারির আড়ালে কৌশলে বছরের পর বছর ৮২৪টি দোকান নিজের দখলে রেখে চালাচ্ছেন ভাড়া-বাণিজ্য। প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রায় কোটি টাকা।
শুধু ভাড়া নয়, ৯১১টি অবৈধ দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে কয়েকটি খাত থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা তার পকেটে পুরেছেন।
এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ভুক্তভোগী চার ব্যবসায়ী তাকে আসামি করে আদালতে পৃথক চারটি মামলা করেছেন। দেড় যুগ ধরে এই নৈরাজ্য চলছে নগর ভবনের কয়েক শ গজ দূরে ফুলবাড়িয়ার নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকির সুপার মার্কেটে।
যার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তির-সেই ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন দেলু অবৈধ দোকান-বাণিজ্য কবজা করতে তিনটি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির পদও দখলে রেখেছেন ২৬ বছর ধরে।
এক্ষেত্রে শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সমিতির নির্বাচন আটকে রাখার অভিযোগও আছে। এই পদের প্রভাবেই দোকান-বাণিজ্যের ফাঁদ তৈরি করেন।
সেই ফাঁদে পা দিয়ে এখন হাজারো ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে চেকের মাধ্যমে ৩৫ কোটিসহ বিভিন্ন সময়ে শতকোটি টাকা ‘ঘুস’ দেওয়ার বিষয় ফাঁস এবং এ ঘটনায় খোকনকে আসামি করে মামলা করে ব্যাপক আলোচিত হন ওই ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন দেলু।
এদিকে তার (দেলুর) সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন।
অবৈধ পথে অর্থ পাচার করে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন সেকেন্ড হোম প্রকল্পে। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেতে ৬২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
ঠিকাদারির আড়ালে অবৈধ দোকান-বাণিজ্য চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন যুগান্তরকে বলেন, ‘এই তিনটি মার্কেটে তৈরি অবৈধ দোকান এরইমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যিনি দোকানগুলো বানিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতারিত করেছেন, তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মেয়র মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্তসাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর দীর্ঘদিন দখলে রেখে ভাড়া-বাণিজ্যের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এটি প্রকৌশল বিভাগ দেখে থাকে।’
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সি আবুল হাশেম যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন মার্কেটে দোকান ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঠিকাদারের আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে মার্কেট পরিদর্শন করে অভিযুক্ত ঠিকাদার দেলুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন তারা। এখনো এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দেলোয়ার হোসেন যা বললেন : উল্লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তিনি সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। সরকারি নিয়ম মেনেই সিটি করপোরেশনের নির্মাণকাজ করে থাকেন।
তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে করপোরেশনের কোনো অভিযোগ নেই। ঠিকাদারির পাশাপাশি তিনি আমদানি-রপ্তানি, হাউজিং, ট্রাভেল এজেন্সিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ী হিসাবেই তিনি নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকির সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পদ দখলের অভিযোগ মিথ্যা।
মার্কেটে অবৈধ দোকান তৈরি করে বরাদ্দ দিয়ে ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করা ও ভাড়া-বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের টেন্ডার ও কার্যাদেশ অনুযায়ী মার্কেট নির্মাণ করেছেন। কোনো অবৈধ দোকান তৈরি ও ভাড়া-বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
একটি মহল মার্কেটের দখল নিতে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে কোথায় মামলা করল তাতে কিছু যায়-আসে না। সম্পদের অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদক সম্পদের হিসাব চেয়েছিল, দিয়ে দিয়েছি।
তবে অনুসন্ধানকারী দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী যুগান্তরকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন মিথ্যাচার করেছেন। সম্পদের তথ্য দিতেও তিনি গড়িমসি করছেন। বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের আমল থেকেই দেলোয়ার হোসেন দেলু করপোরেশনের ঠিকাদারি শুরু করেন। তার মালিকানাধীন হৃদী কনস্ট্রাকশন একের পর এক মার্কেট নির্মাণের কাজ পায়।
বিএনপি-আওয়ামী লীগ সব আমলেই তিনি নগরভবনে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ঠিকাদারির আড়ালেই তিনি শুরু করেন ‘দোকান-বাণিজ্য’। অবৈধ এই বাণিজ্য কবজায় রাখতে দখল করেন নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকির সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির পদ।
মামলার এজাহার : গত এপ্রিলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আলাদাভাবে চারটি মামলা করেন। ব্যবসায়ী কামাল হোসেন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামি দেলোয়ার হোসেন জাকির সুপার মার্কেটের সভাপতি হিসাবে মার্কেট ভবনের সি-ব্লকের উত্তর পাশে দ্বিতীয় তলায় ১২ নম্বর দোকান সংলগ্ন এক্সট্রা ১২/১ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেন।
২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি এই দোকান বাবদ তিনি নেন ৩০ লাখ টাকা। এককালীন এক হাজার টাকার নোটের ৩০টি বান্ডিল সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সমিতির প্যাডে সই করে দোকানের বরাদ্দ দেন তিনি। কিন্তু চুক্তির শর্ত মোতাবেক সিটি করপোরেশন থেকে দোকানের অনুমোদন করিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে কামাল হোসেন ৩০ লাখ টাকা ফেরত চান।
টাকা ফেরত না-দিয়ে এখন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেনকে অনেক অনুরোধের পর যখন আমি দোকানের বৈধতা হিসাবে সিটি করপোরেশনের অনুমোদনপত্র পাইনি, তখনই বুঝেছি আমি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি। এখন আমার দোকানও নেই, টাকাও নেই। দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করায় উলটো হুমকির মধ্যে আছি।
আরেক ভুক্তভোগী আব্বাস আলীর দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আসামি দেলোয়ার হোসেন একজন প্রতারক, বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানকারী। তিনি জাকির সুপার মার্কেটের সভাপতি হিসাবে মার্কেট ভবনের সি-ব্লকের বেজমেন্টের পূর্বপাশে ১৬ নম্বর দোকান সংলগ্ন এক্সট্রা ১৬/১ নম্বর দোকান (৮৫০ বর্গফুট) লিখিতভাবে বরাদ্দ দেন।
এই দোকান বাবদ তিনি নেন ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তিনি সিটি করপোরেশন থেকে দোকানের অনুমোদন করিয়ে দিতে না-পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ২০২০ সালের ১ নভেম্বর আসামির কাছে টাকা চাইলে তিনি টাকা দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। টাকা না-দিলে মামলা করার কথা বললে তিনি বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ ছাড়া ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম ও হাবিবুর রহমানও তাদের মামলার এজাহারে একই ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তাদের মতো হাজারো ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকির সুপার মার্কেটে ৯১১টি অবৈধ দোকান বানিয়ে ওই সব ব্যবসায়ীকে সমিতির প্যাডে সই করে বরাদ্দ দেওয়ার নামে দেলোয়ার হোসেন হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ২৫০ কোটি টাকা-এ অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব দোকান অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করেন।
এ ছাড়া ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, দেলোয়ার হোসেন তিন মার্কেটের বেজমেন্টে ৫৩৯টি দোকান তৈরি করে সেগুলোর নামজারির কথা বলে প্রতি দোকান থেকে পাঁচ লাখ টাকা হারে মোট ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।
বরাদ্দ ও ভাড়া-বাণিজ্য : ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক হিসাবে দেখা গেছে, তিনটি মার্কেটে অবৈধ ৯১১টি দোকানের প্রতিটি সর্বনিু ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেন দেলোয়ার হোসেন। গড়ে ২৫ লাখ টাকা হিসাবে ৯১১টি দোকান থেকে নেন প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। আর ৮২৪টি দোকানের ভাড়া থেকে প্রতিমাসে আদায় হয় প্রায় কোটি টাকা (দোকানপ্রতি গড়ে নয় হাজার টাকা)। এ খাত থেকে গত ১২ বছরে আদায় করা হয় অন্তত দু’শ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বেজমেন্টে দোকানের নামজারি খাত থেকেও কোটি কোটি টাকা আদায় করেন দেলু। সব খাত মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নগর প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ২০১৪ সালে নগর প্লাজার চতুর্থ ও পঞ্চম তলার নির্মাণকাজ পান দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন হৃদী কনস্ট্রাকশন। দেড় বছরের মধ্যে ২০০ দোকানের নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু দোকানগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে না-দিয়ে কৌশলে নির্মাণকাজের সময় বাড়িয়ে নেন। এই ফাঁকে সব দোকান তিনি গোডাউন হিসাবে ভাড়া দেন। দুই বছর ভাড়া-বাণিজ্যের পর তিনি দোকান বুঝিয়ে দেন। প্রতি দোকান থেকে আট হাজার টাকা হারে মাসে ১৬ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। এ হিসাবে দুই বছরে এ খাত থেকে তিনি ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন; যা নির্মাণকাজের বিলের চেয়েও বেশি। একই মার্কেটের ৬, ৭ ও ৮ তলার ৩৪২টি দোকান তিন বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও সেগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে না-দিয়ে ভাড়া-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দেলু। ২০১৮ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিমাসে এসব দোকান থেকে ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা হারে তিন বছরে ১২ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।
সিটি প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মোস্তাক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এই মার্কেটের ৪ ও ৫ তলার ২০০ দোকান একইভাবে দুই বছর আটকে রেখে ভাড়া-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে রাখেন অন্ধকারে। এখনো সিটি প্লাজার ৬, ৭ ও ৮ তলার ৩৪২টি দোকানের মধ্যে ২০০টি দোকান তিনি গোডাউন ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে তিনি এখন মার্কেটমুখী না-হলেও তার লোকজন প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা হারে ভাড়া তোলেন। তার মেয়েজামাই আফিফ জামান আবীর, ভাতিজা রবিন, শাওন, আরমান ও তারেক ভাড়া তোলার কাজ করেন। দেড় বছরে এসব দোকান থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ভাড়া-বাণিজ্য করেন দেলু। ২০২০ সালের শুরুতে দোকানগুলো গোডাউন হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত অগ্রিম ভাড়া আদায় করা হয়েছে। ছয় মাসের ভাড়া এককালীন আদায় করা হয় বলেও জানান মোস্তাক।
জাকির সুপার মার্কেটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ জানান, তাদের মার্কেটের ২, ৩ ও ৪ তলার প্রতিটি ফ্লোরে ৯৪টি করে দোকান আছে। এগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন হৃদী কনস্ট্রাকশন এ কাজ পায়। ২০০৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করে দোকানগুলো করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুঝিয়ে দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। কাজ ঝুলিয়ে রেখে প্রতিটি দোকান আট হাজার টাকা হারে ভাড়া দিয়ে এ খাত থেকে নয় বছরে তিনি হাতিয়ে নেন ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই তিন ফ্লোরের নির্মাণব্যয় বাবদ ৩৫ কোটি টাকা বিলও পান দেলোয়ার হোসেন। এ ছাড়া ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১-এর তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত ৫টি ফ্লোরের নির্মাণকাজ ঝুলিয়ে রেখে কোটি কোটি টাকার ভাড়া-বাণিজ্য করেন তিনি।
দুদকের অনুসন্ধান : জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন দেলুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান কাজে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে দুদক থেকে একটি চিঠিও (স্মারক নম্বর : ০০.০১.০০০০.৫০১.০১.১১৮.১৯/৩২৪৩৬) দেওয়া হয়েছে দেলোয়ার হোসেনকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩টি মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। চিঠিতে তার কর্মকাণ্ড, সম্পদসহ ৭টি ক্রমিকে নানা ধরনের তথ্য ও রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী। দুদক তার সম্পদের তথ্য পেতে দেশের ৬২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে। এরইমধ্যে তার বিপুল সম্পদের ফিরিস্তি এসেছে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে। দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
২৬ বছর সভাপতির পদ দখল : ১৯৯৪ সালে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১-এর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির পদ দখলের মধ্যদিয়ে উত্থান দেলোয়ার হোসেনের। এরপর দুই বছরের ব্যবধানে তিনি ফুলবাড়িয়ার সিটি প্লাজা, নগর প্লাজা ও জাকির সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির পদও দখলে নেন। ফুলবাড়িয়া এলাকার ব্যবসায়ী মহলে পরিচিতি পান ‘চেয়ারম্যান সাহেব’ হিসাবে। ২৬ বছর ধরে ওই তিন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন দেননি তিনি। যারা তার অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন, তাদেরই তিনি নানাভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। এই পদের প্রভাবেই তিনি তিনটি মার্কেটে অবৈধ দোকান বানিয়ে বরাদ্দ দেন। ব্যবসায়ীরা বারবার নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও তিনি নির্বাচন দেন না। সবশেষ গত ৮ মার্চ শ্রমভবনে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় জাকের সুপার মার্কেটের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২২ মার্চ শ্রম অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে সাধারণ সভা ডেকে নির্বাচন করতে বলা হলেও তা কার্যকর হয়নি। দেলোয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন আমিনুল হকের মোবাইলে গত এক সপ্তাহে একাধিকবার কল করা হলে প্রতিবারই বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন