বাফুফেতে নতুন সভাপতি হয়েছেন তাবিথ আউয়াল। নির্বাচিত হয়ে আজ বুধবার বাফুফে ভবনে প্রথমবার এসেছেন। স্টাফদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী দলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দিয়েছেন নানা প্রশ্নের উত্তরও।
শুরুতে তাবিথ বলেছেন, ‘আজকে আমরা বাফুফের সকল স্টাফ, শীর্ষ থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত সবার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। নিজেদের মধ্যে দ্রুত একটা মতবিনিময়ও হয়েছে। এরপরই আমরা সম্প্রতি সাফজয়ী নারী দলের ফুটবলারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি এবং আগামী দিনের কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছি। তবে অত বেশি কিছু আলোচনা হয়নি। আগামী দিনে আমরা আরও গুরুত্ব দিয়ে বসবো নির্বাহী কমিটি ও সাব-কমিটিগুলোসহ। আজ একটা সোশ্যাল গ্যাদারিং হয়েছে সবার মধ্যে।’
৯ নভেম্বর নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা। সেই সভাকে সামনে রেখে তাবিথের কথা, ‘আজকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কারও সঙ্গেই করিনি। ৯ তারিখে নির্বাহী কমিটির সভায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় চলে যাবো। এটা একটা খেলা, অত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। আমরা খেলোয়াড়সুলভ মনমানসিকতা নিয়ে আগামী চার বছর এগিয়ে নিতে চাই, সেটারই একটা বার্তা নিয়ে আমরা এসেছি।’
সাফ চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে তিনি বললেন, ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নারী ফুটবলারদের অবশ্যই কিছু না কিছু প্রাপ্য। ওদের প্রাপ্য ও সাফল্য নিয়ে নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন করে আমরা কিছু করবো। এখন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, যা হওয়ার হবে নির্বাহী কমিটির সভায়। কমিটি অনুমোদন দিলে আপনাদের জানাবো।’
বর্তমান কমিটিতে নতুনের সঙ্গে পুরানোরা রয়েছেন। তাদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা তাবিথের, ‘চার বছর আগে অক্টোবর মাসে আমি ফেডারেশন থেকে বিদায় নিয়েছিলাম। চার বছর পর আবার এসেছি। আমার সঙ্গে বিগত কমিটির কয়েকজন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তাদের সঙ্গে কিছু নতুন মুখ প্রথমবারের মতো ফেডারেশনে এসেছেন। আর আমার মতোই কয়েকজন এক বা দুই টার্ম বাইরে থেকে আবার ফেরত এসেছেন। আমি মনে করি এরকম তিন রকমের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে যাচ্ছি আগামী চার বছরে। এটা আমাদের নিশ্চয় সফলতা এনে দিবে। আমরা খুব উদগ্রীব হয়ে আছি একসঙ্গে কাজ করার জন্য।’
বাফুফে ভবনকে নিজের বাসার সঙ্গে তুলনা করে তাবিথ জানালেন, ‘বাফুফে ভবনে এসে নিশ্চয় খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আমি আমার বাসায় ফিরে এসেছি। ফিরেছি এমন একটা সময়, যখন একটা চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে আসতে পেরেছি, সেটা নিশ্চয় আমাকে গর্বিত করছে। একই সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ এরকম একটা স্ট্যান্ডার্ডে যখন নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়েছি। আশা করবো চার বছর পর এই স্ট্যান্ডার্ডের চেয়ে ভালো অবস্থানে আমরা যাবো, খেলোয়াড়ররাও আরও উন্নতি করবে।’
নতুন সভাপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে তাবিথ এখনই কিছু বলতে চাননি, ‘চেয়ারে বসার বিষয় নিয়ে আমি এখনই কিছু বলতে চাই না। আসলে এই চেয়ারে বসার, নতুন সভাপতি হওয়ার রোমাঞ্চ এখনও আমার মাথায় পুরোপুরি কাজ করে না। বিষয়টা এখনও স্বপ্নের মধ্যে আছে নাকি বাস্তব রূপ পেয়েছে, সেটা এখনও বুঝতে পারছি না। তাই এই উপলব্ধিটা আমি পরে আপনাদের জানাবো। স্বপ্ন তো সবাই দেখে। তবে নির্দিষ্ট করে তো দেখিনি কোন দিন তারিখে সভাপতি হবো। একটা স্বপ্ন তো ছিলই। প্রথম যখন ২০১২ সালে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসি, তখন স্বপ্ন ছিল একদিন সভাপতি হবো। হয়তো এত শিগগিরই হবো ভাবিনি। তবে যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে আমি অবশ্যই গর্ববোধ করছি।’
একটি দল হয়ে কাজ করতে চাইছেন নতুন সভাপতি, ‘আমরা আগামী চার বছর ফুটবলটা এগিয়ে নিতে চাই কারও একজনের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে। কেউ অসুস্থ থাকতে পারে, কেউ সফরে থাকতে পারে। অন্য কেউ তার বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, কাজ এগিয়ে নিবে। সেটা স্টাফদের ক্ষেত্রে যেমন, ঠিক তেমনই আমাদের নির্বাহী কমিটিরও। সভাপতি না থাকলে সিনিয়র সহসভাপতি থাকবেন। সিনিয়র সহসভাপতি না থাকলে সহসভাপতিরা আছেন। এছাড়া নির্বাহী সদস্যদেরও কোনও না কোনও সময় দায়িত্ব নিতে হবে। এভাবেই আমরা দল হয়ে কমিটিটা চালাবো। সিদ্ধান্ত নিতে বা কাজের ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না।’
বাফুফের দেনা নিয়ে তাবিথ বলেছেন, ‘আর আমরা কোনও রকম চাপ অনুভব করছি না। এটা একটা ধারাবাহিকতা। বিগত কমিটি থেকে বর্তমান কমিটি একটা নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব পেয়েছে। একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছে। আমাদের এখন কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে। এছাড়া আমাদের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে, কিছু বিষয়ের সত্যতা কী, কতটুকু পরিমাণ আর্থিক বিষয় রয়েছে নাকি নেই। সেগুলো নিয়ে এজিএম-এ আলোচনা হয় না। আমরা এখনও কোনও বিচার-বিশ্লেষণে যেতে চাই না। আমরা নির্বাহী কমিটির সভায় সত্যিকারের বিষয়গুলো যখন আলোচনায় আনতে পারবো, তখন সত্যিকারের প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্তগুলো জানতে পারবেন।’
নারী দলের জন্য বোনাস ঘোষণা হবে। তা ৯ নভেম্বর পরিষ্কার হবে বলে জানালেন তাবিথ, ‘আমি পরিষ্কার করে জানাতে চাই বাফুফের পক্ষ থেকে ৯ তারিখে একটা ঘোষণা আসবে। এছাড়া তার সঙ্গে আমরা জানতে পেরেছি অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নারী দলকে সংবর্ধনা ও উপহার দিতে চায়। বাফুফের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা আসবে একটা আয়োজন করা হবে, নির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে যাতে আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টা নিশ্চিত করা যায়।’
স্টাফদের সঙ্গে সভা নিয়ে তাবিথের পরিষ্কার কথা, ‘মূলত আমরা বলেছি ভেতরকার কোনও কথা যাতে বাইরে না যায়। ভেতরের কথা আমি শেয়ার করতে পারছি না ভবিষ্যতেও করবো না, ফিফা ও এএফসির এথিকাল স্ট্যান্ডার্ড, ভ্যালু, মোরাল স্ট্যান্ডার্ড এবং লিগ ব্রিচ কোথায় হতে পারে, আমাদের প্রতিশ্রুতি থাকবে যাতে আমরা স্ট্যান্ডার্ডের নিচে না নামি কিংবা কোনও লিগাল ব্রিচে না পড়ি। একটা বা দুইটা ইস্যুতে আলাদা করে বলতে চাই না। সামগ্রিকভাবেই নিয়মের কোনও ব্যত্যয় হতে দিতে চাই না।’
বাফুফে তে সংস্কার বলতে তাবিথ যা বললেন, ‘আমরা বর্তমান ২০ জন সবাই সামনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার মতো মানুষ। পেছনে একেবারেই তাকাচ্ছি না। আমি আপনার এটা প্রশ্ন হিসেবে নিলাম না, পরামর্শ হিসেবে নিলাম। আমাদের সামনের দিনে অনেক কাজ করার আছে। এর মধ্যে আভ্যন্তরীন অনেক মেরামতের ব্যাপার আছে। বাইরেও মেরামতের বিষয় আছে। ফিজিক্যাল সংস্কার যেমন করতে হবে, ইন্টারনাল সংস্কারও আমাদের করতে হবে। এ সব লক্ষ্য উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে আমরা ৯ তারিখে প্রথম নির্বাহী সভা করবো। সেদিন আনুষ্ঠানিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
কথা না বলে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিতে চাইছেন তাবিথ, ‘আমি নিশ্চিত অনেক বিষয়ই আগামী দিনে আসবে। অনেক বিষয়েই আমাদের উন্নতি করার, কাজ করার জায়গা থাকবে যেখানে আমরা উন্নতি করতে পারি। আমাদের এখন দায়িত্ব কথা না বলা। কাজ করা, সমাধান করা। যেই সমাধান দেখে সবাই সন্তুষ্ট থাকে। আর আমরা কোনও কাজে বিলম্ব করবো না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেসব মেরামত করা দরকার সেটা আমরা করবো। আমরা অনেক সংস্কৃতি নিয়ে বাস করি। প্রতিটি কমিটির আলাদা আলাদা সংস্কৃতি থাকবে। আগামী দিনে আপনারাও দেখবেন আমরা কোন সংস্কৃতিতে এগিয়ে যেতে চাই। এ নিয়ে প্রথম দিনে কোনও বিচার বিশ্লেষণে যেতে চাই না। সংস্কৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। সব কিছু বদলানো স্বাভাবিক। আমরাও নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করবো।’
নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা দেওয়ার আহবান বাফুফে সভাপতির, ‘আমার সহযাত্রীদের ব্যাপারে এখনও ডেলিগেটের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের ব্যাপারে এখনই কোন মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই। বরং তাদের প্রশ্ন করা উচিত, তারা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা, আমি নের্তৃত্বের জন্য যোগ্য কিনা। এখানে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আছেন, ফেডারেশনের বাইরে আমার চেয়ে অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড় আছেন, আমার চেয়ে অনেক যোগ্য সংগঠক আছেন। আমার চেয়ে অনেক বড় ব্যবসায়ী আছেন এবং আমার চেয়ে অনেক বড় কর্পোরেট প্রতিনিধি আছেন। আমি নিজেকে গ্রেটফুল মনে করি তাদের প্রতি, কারণ তারা আমাদের নের্তৃত্বের জায়গাটা দিতে রাজি হয়েছেন। মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত দিবেন আমার ব্যাপারে। আরা ওনাদের ডেলিগেটরা নির্বাচিত করে এনেছেন। এখন বাকি দিনগুলো মিলেমিশে আমাদের সবাইকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন