ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে কোনো দল এক ম্যাচ হাতে রেখেই টেস্ট সিরিজ জিতে যাবে, এ যেন কল্পনাতীত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শ্রীলঙ্কা সফরে ধবলধোলাই হয়ে ভারতে যাওয়া নিউজিল্যান্ডকে নিয়েও বাজি ধরার মানুষ খুব বেশি ছিল বলে মনে হয় না।
কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে রোহিত–কোহলি–বুমরাদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতে জিতেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে কিউইরা, যা এক যুগ পর নিজেদের মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ হার।
ভারতের অপ্রত্যাশিত এই সিরিজ হারে ২০২৩–২৫ চক্রের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশকে ধবলধোলাইয়ের পর মনে হচ্ছিল টানা তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠা ভারতের জন্য সময়ের ব্যাপার। সেই ভারতই এখন কঠিন সমীকরণের সামনে।
যদিও ৯ দলের এই প্রতিযোগিতায় রোহিত শর্মার দলই এখনো শীর্ষে। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা দুই হারে শতকরা পয়েন্ট ১১.৪২ কমে গেছে। তাতে তিন দলের লড়াইটা পাঁচ দলে পরিণত হয়েছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকারও লর্ডসের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে খেলার দারুণ সম্ভাবনা জেগেছে।
বর্তমানে ভারতের শতকরা পয়েন্ট ৬২.৮২। দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া শতকরা পয়েন্ট ৬২.৫০ নিয়ে ভারতের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। শতকরা ৫৫.৫৬ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা তিনে, শতকরা ৫০.০০ পয়েন্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ড চারে, আর দক্ষিণ আফ্রিকা শতকরা ৪৭.৬২ পয়েন্ট নিয়ে আছে পাঁচে।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে চারে উঠে আসা বাংলাদেশ ভারতে ধবলধোলাই হয়ে ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মিরপুর টেস্ট হেরে নেমে গেছে আটে। বাংলাদেশের শতকরা পয়েন্ট এখন ৩০.৫৬।
নাজমুল-মিরাজ-মুশফিকদের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা তো নেই; উল্টো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া চট্টগ্রাম টেস্ট হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ধবলধোলাই হলে এবারও পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র শেষ করার শঙ্কায় পড়বে।
বাংলাদেশের মতো ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও ফাইনালে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ভারতের ফাইনালে ওঠার সমীকরণ
এবারের চক্রে ভারতের বাকি আরও ৬টি ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে সিরিজের শেষ টেস্ট এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৫ ম্যাচের বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি। অন্য দলগুলোর ওপর নির্ভর না করে ফাইনালে উঠতে চাইলে ভারতকে এই ৬ ম্যাচের ৪টিতে জিততে হবে।
অর্থাৎ মুম্বাইয়ে শেষ টেস্ট ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে হবে ৩–২ ব্যবধানে। আর নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হলে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে হবে ৪–১ ব্যবধানে। সে ক্ষেত্রে মন্থর ওভার রেটের কারণে কোনো পয়েন্ট জরিমানা করা না হলে ভারতের শতকরা পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬৪.০৪।
ভারতের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ আছে অস্ট্রেলিয়ার। প্যাট কামিন্সের দল যদি ভারতের কাছে ৩–২ ব্যবধানে হারে এবং ২ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ধবলধোলাই করে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬০.৬৩। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া ভারতের পেছনেই থাকবে।
শ্রীলঙ্কার হাতে এখনো ৪ ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২টি ম্যাচের কথা তো আগেই বলা হলো, অন্য দুটি ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কা যদি অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধবলধোলাই হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধবলধোলাই করে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৫৩.৮৫। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পেছনেই থাকবে।
সিরিজ হেরে সমালোচকদের ওপর চড়াও রোহিত কথা বললেন ‘অতিরিক্ত পোস্ট মর্টেম’ নিয়ে
আবার শ্রীলঙ্কা যদি নিজেদের শেষ ৪ ম্যাচেই জেতে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬৯.২৩। সে ক্ষেত্রেও ভারত শীর্ষ দুইয়ে থাকবে। অর্থাৎ রোহিতের দল ফাইনালে উঠে যাবে।
চারে থাকা নিউজিল্যান্ডের বাকি আরও ৪ ম্যাচ। কিউইরা যদি সব কটিতে জেতে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬৪.২৮। তবু ভারত শীর্ষ দুইয়ে থেকে ফাইনালে খেলবে।
মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়ে পাঁচে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বাকি আরও ৫ ম্যাচ। মার্করাম–রাবাদা–মহারাজরা সেই ৫ ম্যাচেই জিতলে তাঁদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬৯.৪৪। সে ক্ষেত্রেও ভারত আরও ৪টি টেস্ট জিতলে ফাইনালে উঠবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন