চার ম্যাচের একটিতেও দলের রান স্পর্শ করেনি ১২০। ফিফটির দেখা পাননি একজন ব্যাটারও। সোবহানা মোস্তারি ও নিগার সুলতানা ছাড়া ব্যাট হাতে বলার মতো পারফরম্যান্স নেই একজনেরও। প্রথম ম্যাচের জয় ছাড়া কোনো ম্যাচে লড়াই জমেনি তেমন একটা। সব মিলিয়ে অনেক ঘাটতি দলে দেখতে পাচ্ছেন নিগার। সামনে তাকিয়ে সেসব ঘাটতি পূরণের পথ খুঁজছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটের হার দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিযান।
আসর শুরুর আগে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপে ১০ বছরের জয়খরা কাটানো। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডকে হারান তারা। ম্যাচজয়ের পর অধিনায়ক নিগারসহ দলকে দেখা যায় আবেগময় উদযাপন করতে। টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ওখানেই শেষ।
প্রথম ম্যাচ জিততে পারলে সেমি-ফাইনালে খেলতে চাওয়ার কথাও বলেছিলেন নিগার ও অন্যরা। তৃতীয় ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেই স্বপ্নের কথা শোনা গেছে দলের কাছ থেকে। কিন্তু একের পর এক ম্যাচে হতশ্রী ব্যাটিংয়ে স্বপ্নপূরণের সামান্যতম সম্ভাবনাও জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
বরাবরই বাংলাদেশের যেটি মূল সমস্যা, সেই ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে এই আসরে। প্রথম ম্যাচে স্কটিশদের বিপক্ষে ১১৯ রান করেও বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে জয় ধরা দিয়েছে। পরের ম্যাচগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই।
ইংল্যান্ডকে ১১৮ রানে আটকে রাখতে পেরেছিল বোলাররা। সেই রান তাড়ায় ব্যাটাররা করতে পেরেছে কেবল ৯৭। পরের দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রান এসেছে ১০৩ ও ১০৬। ম্যাচ কার্যত শেষ প্রথম ইনিংসের পরই।
শনিবার পর্যন্ত আসরের সেরা চার রান স্কোরারের দুই জনই বাংলাদেশের। চার ইনিংসে ১৩৪ রান করেছেন সোবহানা, ১০৪ নিগার। কিন্তু অন্যদের অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে ধুঁকতে হয়েছে দলকে।
এমনকি সোবহানা ও নিগারের রানও আদতে খুব কাজে লাগেনি দলের। বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ, খুব গতিময় ব্যাটিংও করতে পারেননি তারা। সোবহানার স্ট্রাইক রেট ৮৮.৭৪, নিগারের ৮৬.৬৬।
চার ইনিংসে ছক্কা এসেছে মোটে দুটি। ৮০ ওভার ব্যাট করে চার হয়েছে স্রেফ ৩০টি। এক-দুই রান নিতে না পারার চিরন্তন সমস্যা তো ছিলই।
প্রতি ম্যাচের পরই ব্যাটিংয়ে উন্নতির তাড়নার কথা বলা হয়েছে দল থেকে। কিন্তু উন্নতির কোনো ছাপ পারফরম্যান্সে পড়েনি।
চার ম্যাচে এক জয় নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার পর সেই পুরোনো সমস্যার কথাই আবার তুলে ধরলেন নিগার।
“সমস্যাটি খুবই দৃশ্যমান যে, ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা ধুঁকছি। যদি পাওয়ার প্লেতে আমরা ভালো শুরু পাই, তাহলে মিডল অর্ডারে ধুঁকতে হয়। কখনও কখনও সেভাবে শেষ করতে পারি না, যেভাবে করা উচিত। অনেক প্রশ্ন নিয়েই তাই আমরা যাচ্ছি। সামনের পথচলায় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের।”
“বোলাররা ভালো করেছে, ব্যাটাররা রান করতে পারেনি। ইংল্যান্ড ১১৯ রান করেছে, আমরা সেটা তাড়া করতে পারিনি। এটা তো আমাদেরই ব্যর্থতা।”
গত প্রায় এক বছর ধরেই ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তির ঘাটতির কথা নানা সময়ে বলে আসছিলেন কোচ হাশান তিলাকারাত্নে ও অধিনায়ক নিগার। বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পেছনেও এটিকে মূল কারণ বললেন অধিনায়ক।
“এসব পর্যায়ে আসলে ক্রিকেটারদের মানসিক দিকটা আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। দল যথেষ্টই অভিজ্ঞ, বলব আমি। তবে এরকম টুর্নামেন্টে এসে যদি দলীয় প্রচেষ্টা না হয় বা কোনো পারফরম্যান্স না হয়, তাহলে সেটা ম্যাচ জেতার দিকে যায় না। দু-একটি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স এত বড় পর্যায়ে এসে ম্যাচ জেতায় না।”
এই বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অস্থিরতার কারণে আসরটি চলে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি নিচ্ছিল দেশের মাঠে খেলার কথা ভেবেই। ভিন্ন দেশে বিশ্বকাপ চলে যাওয়ার প্রভাব পারফরম্যান্সে পড়েছে কি না, এমন প্রশ্নও উঠল।
তবে বাজে পারফরম্যান্সের পরও অন্তত একটা ইতিবাচক দিক যে, উইকেট-কন্ডিশনকে ঢাল বানাতে চাইলেন না অধিনায়ক।
“বাংলাদেশের সঙ্গে শারজাহর উইকেটের পার্থক্য খুব একটা ছিল না। স্পিন সহায়ক উইকেট ছিল। স্পিনাররা ভালো করেছে। ব্যাটাররা নিজেদের মেরে ধরতে পারেনি। ভেন্যু তাই কোনো কিছু নয়। দল হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ভেন্যুকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটা অজুহাত হবে।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন