সেই ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন মেজবাহ উদ্দিন। সরকারের সাবেক আমলা হয়ে এরপর টানা চারটি নির্বাচন তার হাত দিয়ে হয়েছে। পঞ্চমবারের মতো এবারও বাফুফের নির্বাচন পরিচালনা করতে যাচ্ছেন ৬৬ বছর বয়সী কর্মকর্তা, দায়িত্ব পেয়ে মোটেও বিচলিত নন তিনি। বরং এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে নিজের কাজটুকু করার অভিপ্রায় নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন মেজবাহ। বাফুফের আসন্ন নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তিনি নানান কথা তুলে ধরেছেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।
বাংলা ট্রিবিউন: টানা পঞ্চবারের মতো বাফুফের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন। এটা হয়তো বাংলাদেশের যে কোনও ক্ষেত্রে নির্বাচন পরিচালনায় রেকর্ড বলতে পারেন। নতুন করে দায়িত্বটা পেয়ে কেমন লাগছে? চাপ অনুভব করছেন কি?
মেজবাহ: নাহ তেমনটি হবে কেন! আমি তো মনে করি এটা বড় দায়িত্ব। পঞ্চমবারের মতো দায়িত্বটা হয়তো রেকর্ড হলেও হতে পারে। কোথাও আর কেউ এমন দায়িত্ব পালন করেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে সবার উর্ধ্বে রেখে দায়িত্ব পালন করে যেতে। যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি সততার সঙ্গে কাজ করতে। কতটুকু পেরেছি তা ফুটবল সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।
বাংলা ট্রিবিউন: শুনেছি এবার শুরুতে দায়িত্ব নিতে চাননি। কারণ কী?
মেজবাহ: আসলে আমরা তো প্রয়োজন ছাড়া সারা বছর বাফুফের দরজায় ঘুরঘুর করি না। আমার নিজের কোনও স্বার্থ নেই। তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে বলেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি তো দায়িত্ব নিতে চাইনি। শুরুতে বলেছিলাম বারবার দায়িত্ব পালন করাটা ঠিক হবে কিনা! প্রয়োজনে ফিফা ও এএফসির পরামর্শ নিতে বলেছিলাম। তারপর ওরা জানালো সেখান থেকে কোনও বিধিনিষেধ নেই। তারপর অনুরোধ করায় দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছি।
বাংলা ট্রিবিউন: গতবার নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কেউ কেউ উচ্চবাচ্য করেছিল...
মেজবাহ: দেখুন, এখানে ভোটার মাত্র ১৩৭ জন। এবার তো মনে হয় ১৩৩ জন। এত কম ভোটারদের মধ্যে আপনি কীভাবে অনিয়ম করবেন? ভোটের দিন ফিফা এএফসির কর্তাব্যক্তিরা থাকেন। ভোটাররা নিজেরাই থাকেন। তাদের মাঝে থেকে কোনও অনিয়মের সুযোগ তো আমি দেখি না। আমরা যারা নির্বাচন কমিশনে থাকি, তারা শতভাগ স্বচ্ছতার মাঝে কাজ করে থাকি। এবারও তা করার চেষ্টা করবো।
বাংলা ট্রিবিউন: শোনা যায় ভোটকে সামনে রেখে টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এটা রোধে কমিশন কতটুকু কী করতে পেরেছে...
মেজবাহ: আমাদের সামনে তো কেউ করছে না। আমরা যদি দেখি কেউ এমন কিছু করে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারি। এখন আড়ালে যদি করে থাকে আমাদের কী করার আছে। আমরা তো আগে থেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করে থাকি। গোয়েন্দা বিভাগসহ সবাই জানে। এবারও তাই করবো। যেন কোনও অর্থের লেনদেন না হয়, সবাই নিরপেক্ষ হয়ে ভোট দিতে পারে, যোগ্যরা বেরিয়ে আসে।
বাংলা ট্রিবিউন: এতদিন ধরে বাফুফের নির্বাচন কমিশনার হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।
মেজবাহ: বাংলাদেশের অন্য জায়গাগুলো যেভাবে নির্বাচন হয়, বাফুফেতেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে শুধু ফিফা এএফসির লোকজন থাকে। দেশের প্রায় সব জায়গায় তো অনেকটা রাজনৈতিক আবহে নির্বাচন হয়ে থাকে। বাফুফেও এর বাইরে নয়। আমার দেখা আগের চারবারের মধ্যে শুধু ওয়ান ইলেভেনের সময় কঠিন নির্বাচন হয়েছিল। একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সভাপতি পদে নির্বাচন করেছিলেন। তখন রাজনৈতিক আবহ সেভাবে ছিল না। এরপর কী হয়েছে তা সবাই দেখেছে। এবারও হয়তো কিছুটা এর ছোঁয়া থাকবে। তবে আমি মনে করি ক্রীড়াঙ্গনে এমনটি হওয়া উচিত নয়। হয়তো সামনের দিকে তা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। শুধু ক্রীড়াপ্রেমী সংগঠকরাই ফুটবলে নেতৃত্ব দেবে।
বাংলা ট্রিবিউন: কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করবেন?
মেজবাহ: মাত্র তো আমাদের নাম ঘোষণা করা হলো। এখন চিঠি পেলে তখন রবি বা সোমবার সভা করে সবকিছু ঠিক করবো। এবার তো আমার দুই সহকারী নতুন। আশা করছি তারাও দ্রুত সবকিছু বুঝে নিতে পারবে।
বাংলা ট্রিবিউন: আমরা জানি আপনি একজন ফুটবলপ্রেমীও। ফুটবল কি সঠিক পথে আছে?
মেজবাহ: আমি বলবো ফুটবল শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক চলছে। ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে সারাদেশে এটা ছড়িয়ে দিতে হবে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা অন্য সব শহর-গ্রামে ফুটবল না হলে উন্নতি করা কঠিন। এটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। কাজও করতে হবে।
salah 2016
আগের নির্বাচনের পর কথা বলছেন সালাউদ্দিন
বাংলা ট্রিবিউন: কাজী সালাউদ্দিন যুগ শেষ হচ্ছে। তার ১৬ বছরের মেয়াদকে কীভাবে পর্যালোচনা করবেন?
মেজবাহ: আসলে কাজী সালাউদ্দিনের ১৬ বছরের কাজের মূল্যায়ন আমার করাটা ঠিক হবে কিনা জানি না। তবে একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে বলবো তার সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই আছে। তিনি এসে ফুটবলকে মাঠে রেখেছেন। প্রতিবছর খেলা হয়েছে। খেলোয়াড়দের আন্দোলন করতে হয়নি। তবে তা হয়েছে ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে খেলা সেভাবে হয়নি। এছাড়া মেয়েদের ফুটবলে সাফল্য এসেছে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। উনি নিজে সাফের সভাপতি হয়েছেন।
আর ব্যর্থতা বলতে জাতীয় দলের উন্নতি হয়নি। জনপ্রিয়তা ফিরে আসেনি।
আর্থিক অনিয়মের কারণে ফিফা থেকে সাধারণ সম্পাদককে (আবু নাইম সোহাগ) সাসপেন্ড হতে হয়েছে। অনেক কিছুই ঠিক হয়নি। আর্থিক বিধি করলে হয়তো অনেক কিছু এড়ানো যেতো। আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে সমস্যা হতো না।
এছাড়া কাজী সালাউদ্দিনকে সবাই চেনে জানে। তার অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। তার কাছে প্রত্যাশা বেশিই ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় সবকিছু পূরণ হয়নি।
বাংলা ট্রিবিউন: নতুন যারা আসবেন, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
মেজবাহ: আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবো। যেন ভোটারদের ভোটে সবাই নির্বাচিত হতে পারে। তবে যারা আসবেন তারা দেশের ফুটবলকে কতটকু এগিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকে যায়। তারপরও আমি আশাবাদী।
ফুটবল জনপ্রিয় খেলা। সবাই চাইবে নতুনদের হাত দিয়ে খেলাটা বাংলাদেশে ঘুরে দাঁড়াক। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন