মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট সিরিজ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশি থাকত সিকিউরিটি লিয়াজোঁ। মানুষ তাদের চেনে ওয়াকিটকি বাহিনী হিসেবে। তারা কোনো পেশাদার নিরাপত্তা বাহিনী থেকে নিয়োগ পাননি। তাদের সবার পরিচয় ছিল সরকারদলীয় রাজনৈতিক কর্মী। বিসিবির নিরাপত্তা বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো। ইসমাইল হায়দার মল্লিক এ বাহিনী গড়ে তোলেন বলে জানায় বিসিবির নিরাপত্তা বিভাগ।
এই বাহিনীর হাতে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সাংবাদিক ও ক্রিকেট সংগঠকরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ইচ্ছা করে এগুলো করা হতো বলে মনে করেন ক্রিকেট সংগঠকরা। যদিও বিসিবি সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের ওয়াকিটকি বাহিনীর অপকর্মের দায় নিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, নামমাত্র বিসিবি পরিচালক তিনি। নিজেকে এখন ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও পরিচয় দিতে রাজি নন তিনি।
বিসিবিতে শত শত রাজনৈতিক কর্মী নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করতেন। মল্লিকের ‘পেটুয়া বাহিনী’ হিসেবে পরিচিতি তাদের। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এ কর্মকর্তা বিসিবির সবচেয়ে ক্ষমতাধর পরিচালক। তাঁর অনুমোদন ছাড়া একটি নিয়োগও দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ।
বিসিবি নিরাপত্তা কমিটিতে রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গতকাল সমকালকে ফোনে মঞ্জুর কাদের বলেন, ‘আমি নামমাত্র চেয়ারম্যান ছিলাম, সব কাজ করতেন তারা (মল্লিক)। আমাকে কিছু বলা হতো না। আমি ক্রিকেটের সংগঠকও ছিলাম না, ক্রীড়া সংগঠক। ক্রিকেটের সঙ্গে আমি নেই। রাজনৈতিক কর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা উচিত হয়নি। তারা তো ভালো ব্যবহার করতে জানেন না।’
বিসিবিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগেও প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করেছেন মল্লিক। জালাল ইউনুসদের মতো পোড়খাওয়া সংগঠকরাও নাজমুল হাসান পাপনের আশীর্বাদপুষ্ট এ পরিচালকের কারণে অস্বস্তিতে থাকতেন। ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মল্লিক শেখ সোহেলকে সামনে রেখে মার্কেটিং ও বিপিএল নিয়ন্ত্রণ করতেন।
মোহামেডান কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম টিটুর মতে, ‘একজন ব্যক্তি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলে যা খুশি, তাই করার চেষ্টা করে। বিসিবির সব স্ট্যান্ডিং কমিটির অলিখিত প্রধান ছিলেন মল্লিক। নাজমুল হাসান পাপন নামে সভাপতি ছিলেন, মল্লিক চালাতেন বোর্ড। রাজনৈতিক কর্মীদের যেভাবে ক্রিকেট বোর্ডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা গর্হিত অপরাধ। এই ওয়াকিটকি বাহিনী মল্লিকের বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অথচ হওয়ার কথা ছিল পেশাদার নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে দর্শক প্রবেশ গেট ও গ্যালারি নিয়ন্ত্রণ করা।’
ওয়াকিটকি বাহিনীর দৌরাত্ম্যে সাংবাদিকরা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঠিকমতো কাজ করতে পারতেন না। খেলা দেখতে এসে ছেলের সামনে বাবাকে অপদস্থ হতে হয়েছে। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক কাজী সাবি বলেন, ‘ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হলেন দর্শক। তাদের নির্বিঘ্নে খেলা দেখার সুযোগ করে দেওয়া বোর্ডের কর্তব্য। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত এক যুগে সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হয়েছেন দর্শকরা। কেন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা গেটে থাকবেন? মাস্তানের মতো কেন গ্যালারি নিয়ন্ত্রণে থাকবেন তারা? গ্যালারিতে পচা, বাসি খাবার তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে কিনে খেতে হয়েছে। ১ টাকার পানি ২০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয় স্টল থেকে। এ রকম তো হওয়ার কথা না।’
মূলত টিকিট কালোবাজারি ও অবৈধভাবে দর্শক গ্যালারিতে প্রবেশ করাতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে সিকিউরিটি লিয়াজোঁ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে মল্লিকের মতামত জানতে ফোন করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিসিবি পরিচালকদের কেউই এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মীদের গেট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা– জানতে বিসিবি প্রশাসন ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) হাসিব উজ্জামানকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন