সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রলিং করার এই অভ্যাসটিকে বলা হয় ‘ডুমস্ক্রলিং’। এটি দিয়ে মূলত মানুষের নেতিবাচক খবর খোঁজা এবং পড়ে দেখার একটি প্রবণতাকে বোঝানো হয়। ফলে ডুমস্ক্রলিং মানুষের মন খারাপের কারণ হতে পারে। কিন্তু ঠিক কীভাবে এটি মানুষের মন খারাপের কারণ হয়, সেই বিষয়টি উদ্ঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের মতে, ডুমস্ক্রলিং আমাদের একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে ফেলে দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি মানুষের মধ্যে নেতিবাচক আবেগ সৃষ্টি করে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন—যাদের মানসিক স্বাস্থ্য এমনিতেই খারাপ, তাঁরা নেতিবাচক বিষয়বস্তু বেশি খোঁজেন। আর এগুলো তাঁদের আরও হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। অনেকটা ঘেরাটোপে পড়ে যাওয়ার মতো।
গবেষণাটি সম্প্রতি নেচার হিউম্যান বিহ্যাভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় ১ হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণের আওতায় এনেছিলেন বিজ্ঞানীরা। মানসিক অবস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নের জন্য তাঁরা অংশগ্রহণকারীদের একটি মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিয়েছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৩০ মিনিটের জন্য ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে বলা হয়েছিল। পরে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ইন্টারনেটে তাঁরা কী নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে খারাপ ছিল তাঁরা নেতিবাচক বিষয়বস্তু নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন। আর এই অভ্যাসটি ওই ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটিয়েছে।
গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে আরও গভীরে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বুঝতে চেয়েছিলেন—অংশগ্রহণকারীদের মানসিক অবস্থা কি তাঁদের নেতিবাচক কনটেন্ট খোঁজার কারণ, নাকি নেতিবাচক কনটেন্টই তাঁদের মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে।
দ্বিতীয় ধাপের পর্যবেক্ষণে তাই অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি দলকে ইতিবাচক কনটেন্ট দেখানো হয় এবং অন্য দলটিকে দেখানো হয় নেতিবাচক বিষয়বস্তু।
ফলাফলে দেখা যায়, যারা নেতিবাচক বিষয়বস্তু নিয়ে ছিলেন তারা পরে আরও বেশি নেতিবাচক কনটেন্ট খুঁজে বের করেছেন।
গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীদের ব্রাউজার হিস্টরি দেখা সম্ভব হলেও পাসওয়ার্ড-সুরক্ষিত সাইট হওয়ায় তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হিস্টরি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকেরা ভবিষ্যতে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠারও পরিকল্পনা করছেন।
এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, স্মার্টফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সে সময় কিংস কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি, সাইকোলজি অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন—যেসব কিশোর স্মার্টফোনের আসক্তিতে আছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা বা অনিদ্রার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছিল, অন্তত ২০ শতাংশ কিশোর-তরুণ স্মার্টফোনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আসক্ত। তাদের অনেকেই আবার এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে বেড়ান।
যেসব কিশোর স্মার্টফোনের প্রতি তাদের আসক্তির কথা বিজ্ঞানীদের জানিয়েছিলেন, তাদের অর্ধেকই উদ্বেগের উপসর্গের কথা বলেছিলেন। আর হতাশার কথা জানিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি কিশোর।
সর্বশেষ গবেষণার আলোকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডুমস্ক্রলিং এবং স্মার্টফোন আসক্তি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা অনলাইন ব্যবহারে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রয়োজন হলে এই অভ্যাস কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন