আরও একবার বাংলাদেশের পক্ষে আওয়াজ তুললেন ওপার বাংলার খ্যাতিমান গায়ক, গীতিকার, সুরকার, কবি, লেখক ও সাংবাদিক কবীর সুমন। বললেন, ভারত থেকে বাংলাদেশের মুসলমান আর হিন্দুদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের বিশেষ বার্তা দিলেন তিনি।
শনিবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বাংলাদেশের পক্ষে এই আওয়াজ তোলেন কবীর সুমন।
তিনি লেখেন, ‘আমি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমি মানুষ হতে চাই। মুসলমানরা আমার ও আমার পরিবারের উপরে অত্যাচার করেনি জেঠু। আমার প্রণাম নিবেন। কথাগুলি একটু আগে আমায় লিখে জানিয়েছেন, আমার স্নেহভাজন এক নবীন বাংলাদেশি বন্ধু।’
কবীর সুমন লিখেছেন, ‘তার নাম আমি প্রকাশ করছি না। মাঝেমাঝে তিনি কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যান। তার পরিচয় জানলে আমার দেশে তার কপালে কী জুটবে কে জানে।’
এই সংগীতশিল্পী লিখেছেন, ‘ভারত থেকে যারা বাংলাদেশের মুসলমান আর হিন্দুদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা প্রচার করে চলেছে, তারা জেনে রাখুক, মিথ্যা প্রচারে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজই হয় না। পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালি এবং আরজি কর নিয়ে অকথ্য অনর্গল মিথ্যা প্রচার যেমন প্রচারকদের কোনো সুবিধেই ডেকে আনেনি।’
এর আগে সীমান্তে বাংলাদেশি তরুণী ফেলানী হত্যার প্রসঙ্গ টেনে গত ৩০ নভেম্বর কবীর সুমন ফেসবুকে লিখলেন, ‘সীমান্তের কাঁটাতার-বেড়া থেকে ফেলানী যখন ঝুলছিলেন, কিসের কার অবমাননা হচ্ছিল তখন?’ একইদিন রাত সোয়া ৯টায় দেওয়া আরেকটি পোস্টে তিনি ফেলানীর হত্যা নিয়ে কবিতা আকারে লেখেন-
‘কতগুলো উজবুক পতাকা মাড়ালো, বিজ্ঞরা তাই ব্লাড প্রেশার বাড়ালো। পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক, সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক। কাঁটাতারে ঝুলছিল মেয়েটা আমার, দেশের বুলেট দেশপ্রেমের খামার। কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার, কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার। পরের জন্মে মেয়ে আমি আর তুমি, ফ্ল্যাগহীন কোনও দেশে খুঁজে পাবো ভূমি। আমার সঙ্গে গান গাইবে তুমিও, গাইবে অন্য কোনো জন্মভূমিও।’
আরও লেখেন, ‘কবীর সুমন- পরের জন্মে যে ফেলানির বাবা হবে আর আবু সাঈদের মতো ঘাতকের সামনে বুক পেতে দেবে। জয় ভালোবাসা!’
পোস্ট দুটিতে কবীর সুমন কারও নাম উল্লেখ করেননি। তবে নেটিজেনরা কমেন্ট বক্সে লেখেন, পোস্ট দুটি ওপার বাংলার আরেক কবি, লেখক ও গীতিকার শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে দেওয়া। কারণ, তার দুদিন আগেই বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকা অবমাননা নিয়ে একটি আপত্তিকর পোস্ট দেন শ্রীজাত।
কবিতায় ভাষায় বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘শুশ্রূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ! /যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন।/ভাষা তো নিশ্চয়ই প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি। / আমাকে ‘বাঙালি’ থেকে ‘ভারতীয়’ করে তুললে তুমি। / ভালবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো / তাকে যদি তুলে নাও, অন্য ভাবে কথা হবে দ্রুত। / এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো - / তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়? / নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন। / যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নীচে ছিলে একদিন।’
নেটেজিনরা কবর সুমনের পোস্টের নিচে স্পষ্ট করেই লেখেন, পোস্ট দুটি তিনি শ্রীজাতের কবিতার প্রতিবাদ জানিয়েই দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলায় সবাই তার ভূয়সী প্রশংসাও করেন। এর আগেরদিন দেওয়া আরেকটি পোস্টে কবির সুমন লেখেন, ‘আকারে বড় দেশগুলো মনে করে তারা তাদের আকারে ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর মুরব্বি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সে কিউবা, হাইতির বড়দা। পুয়ের্তো রিকোকে তো বড়দা অঙ্গরাজ্য মনে করে। ভারত মনে করে সে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপালের বড়দা।’
অর্থাৎ, বড় দেশ হিসেবে ভারত যে বাংলাদেশের ওপর যুগের পর যুগ খবরদারি করে আসছে এবং এখনো সেই চেষ্টা করছে, কবির সুমন তার পোস্টে সেদিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করেন। এই পোস্টের কমেন্ট বক্সেও তাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন বাংলাদেশি নেটিজেনরা।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন