দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেল পণ্য আমদানিতে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশের ঋণমানে অবনমন হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করেছে। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণমান অবনমনের প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। বাজার কারসাজির কারণেই পণ্যটির সংকট তৈরি হয়েছে।
আবারো অস্থিতিশীল দেশে ভোজ্যতেলের বাজার। বাজারে পণ্যটির সংকট মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে শুল্কছাড়। এর পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেল পণ্য আমদানিতে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশের ঋণমানে অবনমন হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করেছে।
অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণমান অবনমনের প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। বাজার কারসাজির কারণেই পণ্যটির সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা ২৪ লাখ টনের মতো। সরিষা, বাদাম, তিল, তিসিসহ বিভিন্ন তেলবীজ থেকে উৎপাদিত ভোজ্যতেলে চাহিদা পূরণ হয় তিন লাখ টনের মতো। বাকিটা পূরণ হয় মূলত আমদানির মাধ্যমে। এর মধ্যে ব্রাজিল থেকে ৪৮ শতাংশ ও আর্জেন্টিনা থেকে ৪৬ শতাংশ সয়াবিন তেল আমদানি হয়ে থাকে। অন্যদিকে পাম অয়েলের জোগান আসে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশে প্রতি মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় দুই লাখ টন। আর রমজানে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দ্বিগুণে।
আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দাম বাড়ানোর অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছে কয়েক দফায়। কিন্তু দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে দাম বাড়ানোয় অনীহা দেখিয়েছে সরকার। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সার্বিক পণ্যবাজারে অস্থিতিশীলতা আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দাম না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে সরকার দুই দফায় শুল্ক কমিয়ে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে দেশে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া উপায় থাকছে না। দুই দফায় শুল্ক কমানোর ফলে লিটারপ্রতি দাম ১০ টাকা কমলেও এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। এখন একবারে বড় ধরনের দাম সমন্বয়ও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। তবে বাজার পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সয়াবিনের সরবরাহ বাড়াতে আজ (রোববার) সরকারের সঙ্গে আবার বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল), মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রডাক্টস। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ভোলজার তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে তার ৪৮ শতাংশ এনেছে এ তিন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিইওএল ২১ শতাংশ, মেঘনা ১৪ শতাংশ এবং বসুন্ধরা ১৩ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি করেছে।
টি কে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) মো. শফিউল আতহার তাসলিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকার মানুষের সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য দাম না বাড়িয়ে শুল্ক কমানোর পথে হেঁটেছে। কিন্তু বৈশ্বিক দাম এতটাই বেড়েছে যে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আগে ১৫ দিন কিংবা এক মাসে সীমিত আকারে দাম সমন্বয় করলে এখন অতটা সমস্যা হতো না। মানুষের সমস্যা যাতে না হয় এজন্য ব্যবসায়ীরাও সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমাণে আমদানি করেছে। এখন যে সয়াবিন বা পাম অয়েল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়, সেগুলোর আমদানি খরচ অনেক বেশি। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে। আগামীকাল (আজ) বা আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন বৈঠক হতে পারে। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে সরবরাহ নিয়ে আর কোনো সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশে বিপণন হওয়া ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বেশি বোতলজাত হয় সয়াবিন তেল। তবে সীমিত পরিসরে কয়েকটি কোম্পানি সুপার পাম অয়েলও মোড়কজাত করে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ে চলমান সংকটের আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে সয়াবিনের তুলনায় পাম অয়েলের বাড়তি দাম। বোতলজাত সয়াবিনের তুলনায় খোলা পাম অয়েল কিংবা সুপার পাম অয়েলের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা (পাইকারি ও খুচরা) কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা সয়াবিনের বোতলকে খুলে পাম অয়েল হিসেবে বিক্রি করছে। কোম্পানিগুলো সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করতে না পারলেও যথাযথ তদারকির অভাবে খোলাবাজারে দেদারসে সয়াবিনকে পাম অয়েল কিংবা সুপার পাম অয়েল হিসেবে বিক্রি করেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এতে কোম্পানিগুলো বড় অংকের লোকসানে থাকলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার সুযোগ পেয়েছেন। যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাড়তি লোকসানের ভার নিতে না পেরে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. রেদোয়ানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি কম হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম সবচেয়ে বেশি। পাম অয়েলের দাম সবসময় সয়াবিন তেলের তুলনায় ১০০-১৫০ ডলার কম হয়। কিন্তু বর্তমানে পাম অয়েলের দাম সয়াবিনের চেয়ে ১৪৫ ডলার বেশি। সামনের বছর এর দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পাম অয়েলের আমদানি কমে গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের শতভাগ দাম হাতে না পেয়ে পণ্য লোডিং করছে না। অথচ আগে চট্টগ্রামে পণ্য এলে তখন আমরা দাম পরিশোধ করতাম। গত এক-দেড় মাস ধরে এ সমস্যা হচ্ছে। দেশের ঋণমান অবনমনের কারণে এ সমস্যা আরো তীব্র হয়েছে। সাধারণত এলসি খোলার পর পণ্য আসতে ৫০ থেকে ৫৫ দিন লাগে । কিন্তু এ সমস্যার কারণে পণ্য আমদানির সময়ও বেশি লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে আমদানি কমে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনও কমে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা ব্যাংক ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছি।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সয়াবিনের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই অন্য ভোজ্যতেল যেমন সরিষা তেলের দিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া দাম বাড়ার কারণে ভোজ্যতেলের ভোগও কমেছে। এর ফলে চাহিদাও কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যেসব সয়াবিন তেল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে সেগুলোর দাম টনপ্রতি ১ হাজার ২২০ ডলার। অর্থাৎ এ দামে ক্রয় করা ভোজ্যতেল বাজারজাত করতে হলেও সয়াবিন তেলের দাম অন্তত ১৯০ টাকা হওয়া উচিত। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম ১৬৭-১৬৮ টাকায় প্রতি লিটার সয়াবিন বাজারজাত করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। আমদানি মূল্যের চেয়েও কম দামে সরবরাহ করতে বাধ্য হওয়ায় দেশের অনেক কোম্পানি আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে, যা দেশের সার্বিক ভোজ্যতেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে বলে মনে করছেন তারা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণমান অবনমনের প্রভাব এখনো সেভাবে দেখা যায়নি। আমার ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বরং আমদানি বেড়েছে। যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এলসি খোলায় সমস্যা হতে পারে, তবে সেটিও খুব বেশি হওয়ার কথা নয়।
আমদানিকারকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একাধিক নিত্যপণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করলেও নির্ধারিত দামে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না। খোলা ও কৃষিজ এসব পণ্য নির্ধারিত দামে বিক্রি না হলেও তদারকির অভাবে প্রশাসন নজরদারিতে রাখতে পারছে না। কিন্তু ভোজ্যতেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাতে গোনা কয়েকটি। সরকার আন্তরিক হলে মনিটরিং করাও সহজ। তাছাড়া বোতলজাত সয়াবিনের মোড়কে মুদ্রিত দামের কারণে আমদানিকারকদের কারসাজির সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলে দামের অস্থিরতা, সরবরাহ সংকটের মতো জটিলতা হবে না বলে মনে করছেন তারা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রধান প্রধান ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলোর সরবরাহ না থাকায় বাজারে নন-ব্র্যান্ডেড কোম্পানির দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। খোলাবাজার থেকে পাম অয়েল কিংবা সয়াবিন তেল সংগ্রহ করে বোতলজাত করে বিক্রি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন ১৯০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। একইভাবে পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিনের অভাবে সরিষা, রাইস ব্র্যান, সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও বেড়েছে।
দেশে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেল আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৭টি ঋণপত্র খোলা হয়েছে। জানতে চাইলে ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রাইম ব্যাংক পিএলসির পরিচালক আজম জে চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মাঝে যখন আমাদের দেশে ডলার সংকট ছিল তখনো কিন্তু জ্বালানি কিংবা ভোজ্যতেল আমদানিতে সমস্যা হয়নি। ফলে এ ধরনের কথাবার্তা বানোয়াট। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে একটি চক্র কাজ করে। জাহাজে থাকা অবস্থায় অর্ধেক পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। ব্যাংকের এলসি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, এটি সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা। শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদকরা দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করে আসছে। তাদের আন্তর্জাতিক রেটিং খুব ভালো, তাই সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভোজ্যতেল আমদানির বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। সরকার পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করবে। সরবরাহ বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম কমে আসবে। আমাদের পণ্য মজুদের সক্ষমতা খুবই দুর্বল। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পণ্য মজুদ রাখার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছিল ৭০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের। পক্ষান্তরে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার সমমূল্যের। এ সময়ে ভোজ্যতেলের আমদানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তেলবীজ আমদানি প্রায় ১১ শতাংশ কমে ২৫ কোটি ৪১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের বাড়তি দামের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আগের বছরের একই সময়ের (জুলাই-অক্টোবর) তুলনায় দেশে ভোজ্যতেল আমদানির পরিমাণ কমেছে। দেশে সাম্প্রতিক ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকটের জন্য আমদানি কমে যাওয়াও একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির সরকারের কাছে আসন্ন রমজানের আগে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে পরিশোধিত পাম অয়েল সরবরাহের জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন ও কমোডিটিস মন্ত্রী ওয়াইবি দাতুক সেরি জোহারি বিন আবদুল গনির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুরোধ জানান তিনি। তার সফরের বিষয়ে সে সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মালয়েশিয়ার মন্ত্রী তার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি থেকে বাণিজ্যিক (বিটুজি) ভিত্তিতে বাংলাদেশে পরিশোধিত পাম অয়েল সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের ঋণমান অবনমনের কারণে ভোজ্যতেল আমদানিতে প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সব কমোডিটির ঋণপত্রে “অ্যাড কনফারমেশন” লাগে, যা দেশের ঋণমানের ওপর নির্ভরশীল। দেশের ঋণমান কমলে যা বৃদ্ধি পায়। আমাদের যতটুকু কমেছে তাতে সামান্য খরচ বাড়তে পারে।’ বণিকবার্তা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন