শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের শেষদিকে গণমানুষের অন্যতম অভিযোগ ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি। খেটে খাওয়া মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সাথে সেই মরিয়া অবস্থা মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। জুলাই আন্দোলনের সময় নিম্ন আয়ের মানুষের একটাই কথা ছিল, জিনিসপত্রের দাম কমান, আমাদের বাঁচতে দিন।
বাংলাদেশের মানুষ অভাবনীয় একতা দেখিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। দেশের ক্ষমতায় আসীন হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হাসিনাশাহী দেশের অর্থনীতিসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করে গেছে, সেই ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা খুবই দুরূহ কাজ। কিন্তু, দেশের মানুষ জুলাই বিপ্লবের বলে বলীয়ান হয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। একজোট হয়ে দেশকে গড়তে চাইছে। কিন্তু, মুল্যস্ফীতি কোনোভাবেই যেন কমানো যাচ্ছে না।
নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখলেও, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের সিপিআই তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে গিয়ে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু সুদের হার বাড়লে তা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি চাপ বয়ে আনবে। বিনিয়োগ ও উৎপাদন শ্লথ হয়ে পড়বে। তবে, একইসাথে কিছু ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়। আওয়ামী আমলের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচার ব্যাংকিং খাতকে একদম ধসিয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রায় তারল্য শূন্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আবার মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বন্ডের মাধ্যমে এই বাড়তি অর্থ তাঁরা ফিরিয়ে আনবে।
সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে এই ব্যাপারটিকে সামাল দিতে সরকারের তরফ থেকে আমদানি লাইসেন্স সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে, লুটেরা ও পাচারকারীদের টাকা অতি দ্রুত বাজেয়াপ্ত করে সেগুলো সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে একই সাথে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ দুইই করতে হবে। কাজটি কঠিন, কিন্তু এই কঠিন কাজটি না করতে পারলে জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে রক্ষা করা যাবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন