রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। কোরবানি পশু কেনার শেষ সময়ের তোড়জোড়। যারা কোরবানির করবেন, কিন্তু গরু বা ছাগল কিছুই কেনেননি; এই সময়টা তাদের জন্য চূড়ান্ত মুহূর্ত। উপযুক্ত সময়ের মধ্যে পশু কিনতে না পারলে ঈদের দিন কোরবানি করার আশা মাটি হয়ে যাবে। তাই এই সময়ে সাধারণত হাটে আসা পশু বিক্রেতাদের ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আশায় ফিরে ফিরে তাকান। অন্যান্যবার এই সময়ে কোনো কোনো পশুর হাটে ব্যাপক ভিড় হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন।
রাজধানীর শনির আখড়া গরুর হাটের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায় অসংখ্য ছোট বড় গরু-ছাগল থাকলেও নেই ক্রেতাদের ভিড়। কিছু ক্রেতা হাটে এলেও দরদাম করেই পিছু হাটেন। আবার ব্যাপারীদের চড়া দাম শুনে অনেকে দামাদামিও করতে সাহস করছেন না। এরমধ্যেই আবার স্বল্প মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কিছু ছোট সাইজের গরু ও ছাগল।
সকাল থেকে এই হাটে ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে দেশীয় খাসি বিক্রি হয়েছে। তবে সন্ধ্যা নামার পর খাসির সর্বনিম্ন দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬ হাজারে। ছোট খাসি পাওয়া যাচ্ছে ৬-১০ হাজার টাকার মধ্যে, মাঝারি সাইজের ১০-১৫ হাজার এবং বড় খাসি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে।
জুরাইন এলাকা থেকে ছাগল কিনতে শনির আখড়া হাটে আসেন মো. রাহাত হোসেন। হাটঘুরে তিনি ৯ হাজার টাকায় একটি মাঝারি সাইজের ছাগল ক্রয় করেন। ঢাকা টাইমসকে রাহাত বলেন, ‘শেষ সময় হাটে কিছু কম দামে ছাগল পাওয়া যায়। তাই আজকে এসেছি। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম একটি মাঝারি সাইজের ছাগল কেনার জন্য। তবে দাম অনেক কম থাকায় ৯ হাজার টাকায় কিনতে পারলাম।’
এদিকে এই হাটে ৪৫ হাজার টাকায় মিলছে ছোট সাইজের গরু। এখনো এই হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর থেকে মো. হারুন নামে এক খামারি গত বুধবার ২৩টি গরু নিয়ে এসেছেন শনির আখড়ার এই হাটে। তবে এখনো তার ৭টি গরু বিক্রি হয়নি। যেসব গরু তিনি বিক্রি করেছেন তাও অনেক কম দামে।
হারুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক বছরে ২৩টা গরুর পেছনে হামার ১০ লাখ টাহা খরচ হইছে। তয় এইবার হামি তেমন লাভ করতে পারি নাই। এই ৭টা গরু না বেচতে পারলে হামার অনেক বড় লস হইয়া যাইব। মানুষ হাটে আইসা খাইলি গরু দেইখা যায় দামও করতে চায় না। আমরা তো গরুর দাম বেশি চামুই, তারা তো কম দামও কইতে চায় না।’
সন্ধ্যার পর অবশ্য রাজধানীর ধোলাইখালে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। ইউনুস ব্যাপারী এই হাটে এনেছেন ২০টি মাঝারি আকারের গরু। তার গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। এরমধ্যে তিনি বিক্রি করেছে ১৬টি গরু। এতে তিনি প্রত্যাশিত লাভ করতে পারেননি বলে জানান ঢাকা টাইমসকে।
তিনি বলেন, ‘বিকাল থেকে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। আমি একটু আশাবাদী। বাকি গরু বিক্রি করতে পারলে ১ লাখ টাকার মতো লাভ হইবো।’
পাবনা থেকে ৮টি বড় আকারের গরু নিয়ে কমলাপুর হাটে এসেছেন নুরুদ্দিন ব্যাপারী। তিনি একটি গরু বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। বাকিগুলোর দাম চাচ্ছেন সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘হাটে কিছু কিছু ক্রেতা এলেও বড় গরু দেখেই চলে যায়। দামও করছে না কেউই। তবে আশা করছি আজকের মধ্যে বাকি ৫টা গরু বিক্রি করতে পারব।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন