প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে তৈরি হয় নানা ধরনের সুতা ও প্লাস্টিকের চূর্ণ (পেট ফ্লেক্স)। শুধু তাই নয়, ফ্লেক্স থেকে প্লাস্টিকের চ্যাপ্টা ফিতা, সিনথেটিক কাপড়,
গৃহনির্মাণসামগ্রী ইত্যাদি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দেশের বাজারে বিক্রি ছাড়াও রফতানি হচ্ছে বিদেশে; মাসে হচ্ছে কোটি টাকার বাণিজ্য। তবে এই খাতে ভালো মুনাফা হলেও, রাজশাহীতে গড়ে উঠা ৩০টির মতো কারখানা প্লাস্টিক বর্জ্যের অভাবে ডুবতে বসেছে।
রাজশাহী নগরীর সিটি বাইপাস এলাকায় প্লাস্টিক বোতলের ভাগাড়। ছবি: সময় সংবাদ
সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর সিটি বাইপাস এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভাগাড়ে আর্বজনার পাহাড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টোকাই বা ছিন্নমূল মানুষ সেখান থেকে সংগ্রহ করেন প্লাস্টিকের পানির বোতলসহ নানা বর্জ্য। তারপর সেগুলো বিক্রি করেন ভাঙারির দোকানে।
প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী ছিন্নমূল মানুষ ও হকারদের ভাষ্য, কয়েক বছর আগেও ময়লা আবর্জনার সঙ্গে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বর্জ্য ভাগাড়ে বেশি পরিমাণে মিলত। এখন চাহিদা ও দাম বাড়ায় সেগুলো আগের মতো মেলে না।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল কিনে নেয় রিসাইকেলিং প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরুতে সেগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে করা হয় বাছাই। পরে পানিতে ধুয়ে ছোট ছোট কুচি করে কেটে প্যাকেজিংয়ের পর পাঠানো হয় ফ্লেক্স তৈরির কারখানায়। ফ্লেক্স রফতানি হয় বিভিন্ন দেশে। কিছু সরবরাহ করা হয় স্থানীয় সুতা ও দড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। গত কয়েক বছরে ভালো মুনাফা, কর্মসংস্থান ও পরিবেশের জন্য সহায়ক হওয়ায় এ শিল্পকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে গড়ে ওঠে ৩০টির মতো কারখানা।
তবে কাঁচামাল হিসেবে পর্যাপ্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের অভাবে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি কারখানা বলে জানান উদ্যোক্তারা।
রাজশাহী এসএম প্লাস্টিকের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম বলেন, আগে খুব সহজেই ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা জিনিসপত্র পাওয়া যেত। এখন সেগুলো কম পাওয়া যাচ্ছে। এর চাহিদা ও দাম বাড়ায় হকার ও ভাঙরি ব্যবসায়ীরা সরাসরি বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছে। সে কারণে স্থানীয়ভাবে এটি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহীর পবার নুর নবী ট্রেডার্সের মালিক নুর নবী গাজী বলেন, উৎপাদিত বেশিরভাগ ফ্লেক্স রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। কিছু আবার স্থানীয় পিএসএফ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকে ফ্লেক্স ও ফেব্রিক পণ্য উৎপাদনে ছয় থেকে সাতটি প্রতিষ্ঠান বড় বিনিয়োগ করেছে। তাদের চাহিদা বেশি হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়েছে।
রাজশাহীর কারখানাগুলোতে ৩৩ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও পানির বোতল বিক্রি হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের করা গবেষণার তথ্যমতে, দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৩৬ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন