হাউ ডাস আ জার্নালিস্ট রিপোর্ট ইন মোদি’স ইন্ডিয়া?’ শিরোনামে একটি লেখায় ভারতের অনুসন্ধানী সাংবাদিক রানা আইয়ুব তুলে ধরেছেন কিভাবে ভারত ক্রমশ সাংবাদিকদের জন্যে এক বিপজ্জনক দেশ হয়ে উঠছে। তিনি তার লেখায় লিখেছেন, গত ৮ নভেম্বর ক্রমাগত ফোনকলে ঘুম ভেঙে যায় তার। তাকে জানানো হয় একটি উগ্রবাদী এক্স হ্যান্ডেল থেকে তার ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্রমাগতভাবে আইয়ুবকে হয়রানি করার জন্য পোস্টগুলো টানা শেয়ার করার জন্যও উদ্বুদ্ধ করা হতে থাকে। আর এই পোস্টের পর তার ফোনে প্রচুর কল আসে।
যার বেশির ভাগই ছিল যৌন ইশারা এবং হত্যার হুমকি। শত চেষ্টা করেও ফোন কলের মাধ্যমে এমন সহিংসতার ধারাবাহিক প্রবাহ থেকে রক্ষা পায়নি ভারতীয় এই সাংবাদিক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলেও তারা এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। হেনস্তা থেকে রক্ষা পেতে ভারতের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সহযোগিতা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া অভিযোগের জন্য থানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও কোনো ফল পাননি তিনি। একটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে হেনস্তাকারীর পরিচয় তুলে ধরলেও এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যেগ নেয়নি পুলিশ। কেননা ফ্যাক্ট চেকিংয়ে যার নাম প্রকাশ পেয়েছে তিনি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন স্থানীয় নেতা। রানা আইয়ুব বলছেন ভারতীয় সাংবাদিকদের জন্য এমন অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।
অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতার জন্য রানা আইয়ুব নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। ক্রমাগতভাবে তাকে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তার বিষয়টি ভারতীয় সাংবাদিক মহলে সাড়া ফেলেছে। সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেল ব্যবহার করে তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ফাঁস করার মাধ্যমে তার ওপর হয়রানির নিরন্তর প্রবাহ শুরু করেছে ভারতের একটি ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ গোষ্ঠী। যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে মৃত্যুর হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে পুলিশ নিশ্চুপ। তাদেরকে জানানো হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভারতীয় এই সাংবাদিক যখন কাজের জন্য ক্রমাগত হুমকি, নজরদারি এবং আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন তখন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতে সাংবাদিকদের ওপর ক্রমশ হয়রানি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে।
অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন করায় ভারতে সাংবাদিকদের ওপর এমন বিপদ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ডিপফেইক পর্নো চিত্রের মাধ্যমেও সম্মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রানা আইয়ুব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অনুসরণ করে এমন একটি এক্স অ্যাকাউন্টে তার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। যার ফলে তার সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন হয়রানি ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে শুরু করে বাস্তব জীবন পর্যন্ত বিস্তৃত।
মণিপুরে একটি প্রতিবেদন তৈরির সময় রানা আইয়ুবের পেছনে গুপ্তচরও নিয়োগ করা হয়। সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা তার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করেছিলেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ক্ষণে ক্ষণে তার ছবিও তুলেছেন। সাংবাদিকের ওপর এমন রাষ্ট্রীয় নজরদারি বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করেন ভুক্তভোগী ওই নারী সাংবাদিক। কেননা এতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়।
রানা আইয়ুব লিখেছেন, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান ১৫৬তম। ক্রমেই ভারত সাংবাদিকদের জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠছে। বিশেষ করে স্বাধীনভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য বর্তমান ভারত একদমই অনুকূলে নয়। এছাড়া নারী সাংবাদিকদের অনলাইনের মাধ্যমে হেনস্তা করার ঘটনাও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে পেশাগত জীবনকেও হুমকির সম্মুখীন করা হচ্ছে। যার ফলে বহু সাংবাদিক লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এর পাশাপাশি এসব সাংবদিকদের ‘হিন্দুবিরোধী’ বলেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আইনিভাবেও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তিনি। কেননা আইয়ুবের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে একজন সাংবাদিকের জন্য সত্য তুলে ধরা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
আইয়ুব বলেছেন, যে দেশ গণতন্ত্রের জন্য বেশ গর্বিত সেখানে সাংবাদিকদের অবস্থা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী সাংবাদিকরা বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন। ক্রমাগত ডিজিটাল হয়রানি, রাষ্ট্রীয় নজরদারি এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের মাটিতে বসে সত্য তুলে ধরা এখন বেশ কঠিন।
রানা আইয়ুবের নিউজলেটার থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন