ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৩০ জন ইহুদি নাগরিককে গ্রেপ্তারের ঘটনা ইসরায়েলে বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, এই ঘটনাটি ইসরায়েলে ইরানের গুপ্তচরবৃত্তির সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের বক্তব্য অনুযায়ী— একজন পারমাণু বিজ্ঞানী, কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার প্রচেষ্ঠা এবং ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিল এসব গুপ্তচর।
বুধবার রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব গুপ্তচর ইসরায়েলের প্রান্তিক অঞ্চলের নাগরিক। এদের মধ্যে বেশির ভাগই অভিবাসী, সেনাবাহিনী থেকে পলাতক এবং দণ্ডপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী। এরা গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে নানাভাবে নাশকতা সৃষ্টির কাজ করত। যেমন; দেয়ালে দেয়ালে নেতানিয়াহু বিরোধী বা সরকার বিরোধী গ্রাফিতি আঁকা এবং যেখানে-সেখানে গাড়ি ভাঙচুর।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অন্যতম একজন ভ্লাদিসলাভ ভিক্টর্সন (৩০), যাঁকে গত ১৪ অক্টোবর তাঁর ১৮ বছরের প্রেমিকাসহ তেল আবিবের রামাত গান নামক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভ্লাদিসলাভ ভিক্টর্সন ২০১৫ সালে, ১৪ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
শিন বেটের তদন্ত থেকে জানা যায়, ভিক্টর্সন ইরানের হয়ে গুপ্তচরের কাজ করছিলেন। এর অংশ হিসেবে তিনি দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা, অর্থ লুকানো, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পোস্টার টাঙানো এবং তেল আবিবের হাইয়ারকন পার্কে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছিলেন।
ভিক্টর্সনের আইনজীবী আইগাল ডোটান রয়টার্সকে জানান, তাঁর ক্লায়েন্ট কঠিন অবস্থায় রয়েছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ হবে। তাই তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে চান না।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের তথ্যমতে, ইরান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গুপ্তচরদের খুঁজে নেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ১৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে তথ্য সংগ্রহের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শিন বেট জানিয়েছে, এর আগেও ইরান ককাসাস অঞ্চলের প্রবাসী ইহুদিদের মাধ্যমে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এই গুপ্তচরদের মধ্যে যারা ইরানি গুপ্তচরদের সহায়তায় কাজ করেছিল, তাঁদের কাজ প্রথমে অর্থের বিনিময়ে শুরু হয়। কিন্তু পরে লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়, এমনকি ব্ল্যাকমেলও করা হয়।
এই ঘটনার পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিন বেটের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শালোম বেন হানান রয়টার্সকে জানান, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যার মাধ্যমে ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা খাতে ইরানের আঘাত প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েল এই ঘটনার মাধ্যমে ইরান ও তাদের শত্রুদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সব গুপ্তচরদের ধরা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন