গত মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। বক্তৃতায় তিনি দেশকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ এবং ‘উত্তর কোরিয়ার হুমকি’ থেকে রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারির কথা বলেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় এই দুইয়ের কোনোটারই বিস্তারিত কিছু বলেননি এবং উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে কোনো ধরনের হুমকির কথা আর কোনো সূত্র থেকে জানা যায়নি।
সামরিক আইন জারির এ ঘোষণার পরপরই রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয় এবং বিরোধী দলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদ সদস্যরা এক অধিবেশনে মিলিত হয়ে সামরিক আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করেন। এ প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন।
সর্বশেষ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সামরিক আইন জারি করে তীব্র সমালোচনার মুখে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
ভাষণে ইউন বলেন, ‘দেশে সামরিক আইন ঘোষণার জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার ফলে যে কোনও আইনি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির দায় আমি এড়াতে পারি না। মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে যে আরেকবার সামরিক আইন জারি করা হবে কিনা; তবে আমি আপনাদের স্পষ্টভাবে এটা বলতে পারি যে, আরেকবার সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়া হবে না।’
ধারণা করা হচ্ছিল এই ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিবেন। কিন্তু তা না করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলকে অর্পণ করবেন। অভিশংসন বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে জানা গেছে, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে আজ শনিবার দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে।
তবে বিরোধীরা বলছেন, পরিস্থিতি উত্তরণে অনেক দেরি করে ফেলেছেন ইউন সুক-ইওল। ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন পদত্যাগ করেছেন।
নামডায়েমুন মার্কেটে সস্ত্রীক কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন হ্যান জাঙ্গমো (৫৯) নামের এক দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়াই এখন যথেষ্ট নয়। তাকে অবশ্যই স্বেচ্ছায় আগে পদত্যাগ করতে হবে, না হয় তাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে আমি খুবই অযোগ্য বলে মনে করি। যে ব্যক্তি জনগণের সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় আস্থাকে ভঙ্গ করেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।
হ্যান আরও বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট ইউন অব্যাহতভাবে ক্ষমতার রশি ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে তা হবে সবচেয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ বছর পর সামরিক আইন জারির ঘটনা ঘটল এবং ১৯৮৭ সাল থেকে কোরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ ছিল অকল্পনীয়।
৩০০ আসনের পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টির ১০৮টি আসন আছে এবং অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে লাগবে ২০০ ভোট; তার অর্থ হচ্ছে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হতে কমপক্ষে আটজন সরকারপক্ষের সদস্যকে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিতে হবে।
ইতোমধ্যে পিপল পাওয়ার পার্টির নেতা চু কিয়ং-হো বলেছেন যে তার দলের সদস্যরা অভিশংসনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। কিন্তু তার এই দাবি শেষ পর্যন্ত টিকবে কি না, সেটা দেখার বিষয়।
কেননা সামরিক আইন জারির পর সেনাবাহিনীর বাধা পেরিয়ে পার্লামেন্ট সদস্যরা যখন বৈঠক করেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১৯০ জন এবং তারা সবাই প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছিলেন।
আবার ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্ষমতাসীন পিপিপি নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনের পক্ষে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার আগাম পদত্যাগ অনিবার্য।’
এখন শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয় কি হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন