ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সতর্ক করে দিয়েছেন যে বিশ্ব এখন ‘তৃতীয় পারমাণবিক যুগে’র মুঠোয় চলে এসেছে। এতে রয়েছে একই সময় একাধিক চ্যালেঞ্জ। ওই ধরণের সুরক্ষা এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আগেকার হুমকি প্রতিহত করতে পারতো।
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অ্যাডমিরাল টনি র্যাডাকিন বলেন, যদিও এমন সম্ভাবনা নেই যে রাশিয়া যুক্তরাজ্য কিংবা তার নেটো মিত্রদের উপর সরাসরি পারমাণবিক আক্রমণ চালাবে, তবুও ব্রিটেন যে হুমকির সম্মুখীন তার গুরুত্বটা তাকে বুঝতে হবে।
বুধবার রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনিস্টিটিউটে দেয়া এক ভাষণে র্যাডাকিন বলেন, শীতল যুদ্ধের সময়ে দেখা গেছে দু’টি পরাশক্তি পারমাণবিক নিরোধকের কারণে নিরাপদ দূরত্বে থেকেছে। অতীতের তিন দশক পারমাণবিক অস্ত্র সম্প্রসারণের উপর বিধিনিষেধ জারির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মধ্যেই বিষয়টি আবদ্ধ ছিল। বর্তমান যুগটি অনেক জটিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয় পারমাণবিক যুগের সূচনায় রয়েছি। এটি একইসাথে একাধিক উভয় সঙ্কট দ্বারা সংজ্ঞায়িত। যেখানে রয়েছে পরমাণুর সম্প্রসারণ এবং ব্যাহতকারী প্রযুক্তি এবং আগে যে নিরাপত্তা কাঠামো ছিল তার প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি।’
র্যাডাকিন বলেন, পশ্চিম যে সব চ্যালঞ্জের সম্মুখীন তার মধ্যে রয়েছে কৌশলগত অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে রুশ হুমকি, পারমাণবিক মওজুদ বাড়ানোর ব্যাপারে চীনের উদ্যোগ, নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় ইরানের সহযোগিতা করার ব্যর্থতা এবং উত্তর কোরিয়ার ‘অদ্ভুত আচরণ’। আর এগুলো এমন এক সময় হচ্ছে যখন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য ক্রবর্ধমানভাবে সাইবার আক্রমণ, অন্তর্ঘাতমূলক কাজ এবং অপতথ্য চলছে।
তিনি ইউক্রেনের সীমান্ত বরাবর রাশিয়ার বাহিনীর সাথে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য মোতায়েনকে এই বছরের ‘সবচেয়ে অস্বাভাবিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেন এবং সতর্ক করে দেন যে আরো সেনা মোতায়েনের আশঙ্কা রয়েছে।
সামরিক ও কৌশলগত বিষয়ে দেশটির অন্যতম শীর্ষক চিন্তক গোষ্ঠী আরইউএসআইতে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধানের বার্ষিক ভাষণ দেয়ার একটা রেওয়াজ রয়েছে।
র্যাডাকিন তার এই ভাষণে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর অব্যাহত সংস্কারের পক্ষে কথা বলেন যাতে করে যুক্তরাজ্য পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে সাড়া দিতে পারে। আর এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেনের পরমাণু নিরোধক যা হচ্ছে, আমাদের মওজুদের একটি অংশ যে সম্পর্কে রাশিয়া অবগত আছে এবং পুতিনের উপর অন্য কিছুর চাইতে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।
ব্রিটেনের কমপক্ষে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্বলিত একটি ডুবো জাহাজ সব সময়ে সমুদ্রে রয়েছে যাতে কোনো পারমাণবিক আক্রমণ হলে তা মোকাবিলা করা যায়।
যুক্তরাজ্য সরকার বর্তমানে একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা পরিচালনা করছে। যাতে এটা নির্ধারণ করা যায় যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য তার সশস্ত্র বাহিনীতে কী রকম লোক রাখা যায় এবং কোন ধরণের সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়বে। এর ফলাফল আগামী বছরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হওয়ার কথা।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন