ঝটিকা হামলার শুরুর তিন দিনের মধ্যে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী আলেপ্পোতে ঢুকে পড়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। ২০১৬ সালে ইরান ও রাশিয়া-সমর্থিত সরকারি বাহিনী নগরীটি পুনর্দখলের পর এই প্রথম বিদ্রোহীরা এখানে প্রবেশ করল। তুরস্ক বিদ্রোহীদের সমর্থন করছে বলে কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে।
কয়েক বছর ধরে স্থিতিবস্থা থাকার পর চলতি সপ্তাহে বিদ্রোহী বাহিনী হঠাৎ করে হামলা চালাতে শুরু করে। প্রথমে তারা নগরীর বাইরের বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করে। শুক্রবার রাতে তারা নগরকেন্দ্রে প্রবেশ করে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী অবশ্য বলেছে, তারা 'বড় ধরনের একটি হামলা' প্রতিহত করছে। তারা নিজেদের শক্তি বাড়ানোর দাবিও করেছে।
নবগঠিত বিরোধী জোট দি মিলিটারি অপারেশন্স কমান্ড শুক্রবার জানায়, তারা আলেপ্পো নগরীর ঠিক বাইরে অবস্থিত সিরিয়া সরকারের মিলিটারি সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। পরে তারা বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার মুখে সিরিয়া বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলোর আলেপ্পো ত্যাগের ভিডিও প্রকাশ করে। তবে সিরিয়া ও রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো বিদ্রোহীদের অবস্থানে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
বিদ্রোহী বাহিনী শুক্রবার বিকেলে নগরীর আরো ভেতরে প্রবেশ অব্যাহত রাখে।
এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই ২৫৫ জন নিহত হয়েছে। তাদের বেশিভাগই যোদ্ধা। তবে ২৪ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে বলে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউমেন রাইটস জানিয়েছে। এছাড়া ১৪ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পলিসির বিশ্লেষক নিক হেরাস বলেন, 'আলেপ্পো অঞ্চলে সিরিয়ার সামরিক অভিযান হতে পারে, এমন ধারণার মধ্যে আগেভাগেই বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়েছে।'
তিনি বলেন, সিরিয়া সরকার এবং এর প্রধান সমর্থক রাশিয়া ওই ধরনের অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে। এর ফলে চার বছর আগে আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলাফল সিরিয়া সরকারের অনুকূলে চলে যায়। সরকারি বাহিনী প্রায় পুরো দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ইরান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারাও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থনে কাজ করে। আলেপ্পো এলাকায় হিজবুল্লাহর ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।
হেরাস বলেন, ইরানিরা এখন লেবাননের দিকে নজর দেয়ায় রুশ-সমর্থিত সিরিয়ার সরকারের হাত থেকে অনেক এলাকা পুনর্দখল করার জন্য ভালো অবস্থানে রয়েছে বিদ্রোহীরা।
অবজারভেটরি পরিচালক রামি আবদেল রহমান বলেন, সরকারি বাহিনী এই হামলার জন্য পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিল।
তিনি বলেন, সরকারি বাহিনী এখন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা দেখার বিষয়। তারা কি হিজবুল্লাহর ওপর নির্ভর করবে? কিন্তু হিজবুল্লাহ তো এখন লেবাননে ব্যস্ত।
সূত্র : সিএনএন, আরব নিউজ এবং অন্যান্য
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন