রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডিপ্রোতে হামলায় নতুন ধরণের একটি মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দাবি করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘ওরেশনিক’নামে পরিচিত এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহকৃত দূরপাল্লার অস্ত্র ইউক্রেন কর্তৃক ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন পুতিন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) তিনি এই মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘যেসব দেশ তাদের অস্ত্র দিয়ে আমাদের লক্ষ্যবস্তু বানাতে সহযোগিতা করছে, তাদের সামরিক স্থাপনাগুলোতেও হামলা চালানো হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই সপ্তাহে ইউক্রেনকে এটিএসিএমএস এবং স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে হামলার অনুমতি দেয়।
নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলায় পুতিনের সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নিষ্ঠুরতা আরও বাড়ানোর স্পষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে রাশিয়ার শান্তির প্রতি কোনও আগ্রহ নেই। পুতিন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং যারা প্রকৃত শান্তি চান, তাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন।
ক্ষেপণাস্ত্রটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) বৈশিষ্ট্যযুক্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইউক্রেনের এই ধারণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, এই হামলায় একটি পরীক্ষামূলক মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তাদের মতে, এ ধরনের অস্ত্র রাশিয়ার হাতে সীমিত পরিমাণে রয়েছে এবং এটি যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তনে তেমন ভূমিকা রাখবে না।
পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে পারমাণবিক ঝুঁকি প্রশমন চ্যানেলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছিল।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ম্যাথু স্যাভিল বলেন, রাশিয়ার এই নতুন অস্ত্রটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় দীর্ঘ পাল্লার হতে পারে। এর পরিসীমা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার।
পুতিনের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এটি একটি মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইআরবিএম), যা সাধারণত ৩ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
পারমাণবিক নীতিমালা শিথিল ও নতুন হুমকি
পুতিন আরও বলেছেন, এই অস্ত্রের কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। এটি ১০ মাখ গতি, যা প্রতি সেকেন্ডে ২.৫ থেকে ৩ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানতে সক্ষম।
তিনি পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়া যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। যদি কেউ এখনও সন্দেহ করে, তবে তাদের আর করা উচিত নয়। প্রতিবারই আমরা পাল্টা জবাব দেব।
পরিস্থিতির ক্রমাবনতি
মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধ ১ হাজারতম দিনে পৌঁছেছে। রাশিয়ার আগ্রাসন ও ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধ এক নতুন ও বিপজ্জনক ধাপে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধের এই নয়া পর্ব পশ্চিমা জোট এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক সামরিক সহায়তার পর মস্কো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে বিমান হামলা জোরদার করেছে। এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে।
রাশিয়ার এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার নতুন পারমাণবিক নীতিমালা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে পুতিন একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, মস্কো নিজের সামরিক সক্ষমতা আরও উন্নত করতে প্রস্তুত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন