তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢঙ্কা বাজল? নাকি নেহাতই 'ছোটখাটো' আক্রমণ এটা? যুদ্ধের ১,০০০তম দিনে ইউক্রেন মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ছয়টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানোর পরে ওই প্রশ্নটিই উঠতে শুরু করেছে। বিশেষত এমন একটা সময় রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে ওই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করার যে নিয়ম ছিল, সেটা আরো শিথিল করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই সিদ্ধান্তের ফলে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার কোনো দেশ যদি সাধারণ কোনো হামলা চালায়, তাহলেও পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে মস্কো। আমেরিকার মদতপুষ্ট ইউক্রেনের হামলার ক্ষেত্রেও রাশিয়া ওই পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আর মস্কোর তরফে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার ব্রিয়ানস্কি এলাকায় যে হামলা চলেছে, সেটা চালানো হয়েছে আমেরিকার তৈরি করা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ অবশ্য নিশ্চিত করেননি যে আমেরিকার দেয়া মিসাইল দিয়েই রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি শুধু জানিয়েছেন যে ব্রিয়ানস্কি এলাকার একটি গুদাম ঘরে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে লড়াই করা ফৌজিদের গোলাগুলির জোগান দেয়া হচ্ছিল।
সংবাদসংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মদতপুষ্ট একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওয় দেখা গিয়েছে যে অজানা কোনো একটি জায়গা থেকে আমেরিকার দেয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। কবে সেই ভিডিও তোলা হয়েছে, তা অবশ্য নিশ্চিত করা যায়নি।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাত আরো বাড়ল?
কিন্তু ইউক্রেন যে রাশিয়ায় আক্রমণ চালাল, তাতে কি সংঘাত আরো বাড়ল? এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্তাদের মতে, ইউক্রেন যে হামলা চালিয়েছে, সেটার 'গেম চেঞ্জার' হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়েও নিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, 'আমার মনে হয় যে একটা শক্তি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করব। আর আমি ওই মন্তব্যে অবিচল থাকছি।'
বিশ্বের সমস্ত অস্ত্রেও কিছু হবে না ইউক্রেনের, মত বিশেষজ্ঞদের
একই সুরে ডিফেন্স প্রয়োরিটিসের সামরিক বিশ্লেষণ বিভাগের ডিরেক্টর জেনিফার কাভানাঘ দাবি করেছেন, আমেরিকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো পট পরিবর্তন হবে না। রাশিয়াকে প্রকৃত অর্থে ধাক্কা দেয়ার জন্য এখন ইউক্রেন যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটা প্রচুর পরিমাণে চাই কিয়েভের।
কিন্তু ইউক্রেনের হাতে অত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নেই বলে জানিয়েছেন ডিফেন্স প্রয়োরিটিসের সামরিক বিশ্লেষণ বিভাগের ডিরেক্টর। এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বলেছেন যে সেই ক্ষেপণাস্ত্র পাবেও না ইউক্রেন। কারণ আমেরিকার হাতেই সে রকম ক্ষেপণাস্ত্র কম আছে। তাছাড়া ইউক্রেনের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনাসদস্যের অভাব। এ অভাবটা পূরণ করতে পারবে না আমেরিকা, ইউরোপ বা বিশ্বের সমস্ত অস্ত্রও।
'….সেটার অর্থ হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ'
এরই মধ্যে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, 'রাশিয়ার নয়া পারমাণবিক নথির অর্থ হলো যে আমাদের দেশে যদি ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, তাহলে রাশিয়ার উপরে হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিয়েভ এবং গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো পরিকাঠামোয় গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে পালটা জবাব দিতে পারে রাশিয়া। সে যেখানেই ওই পরিকাঠামো থাক না কেন। সেটার অর্থ হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।'
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন