রাশিয়া প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে তাদের কুরস্ক অঞ্চলে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল সোমবার এ মন্তব্য করেছেন। কুরস্ক দক্ষিণ রাশিয়ার অঞ্চল, যেখানে কিয়েভ আশ্চর্যজনকভাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিল।
জেলেনস্কি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল অলেকজান্ডার সিরস্কির কাছ থেকে একটি ব্রিফিং পাওয়ার পর টেলিগ্রামে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সেনারা কুরস্কে প্রায় ৫০ হাজার শক্তিশালী শত্রুগোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
’
একজন মার্কিন কর্মকর্তা রবিবার সিএনএনকে বলেছেন, রাশিয়া কুরস্কে ইউক্রেনের অবস্থানে আক্রমণ চালানোর জন্য কোরিয়ার সেনাসহ বিশাল একটি বড় বাহিনী প্রস্তুত রেখেছে। তবে ক্রেমলিন তার ভূখণ্ডে উত্তর কোরিয়ার সেনা উপস্থিতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করে রাশিয়া।
কিয়েভ গত আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অনুপ্রবেশ শুরু করে, যা শুধু মস্কো নয় তার মিত্রদেরও অবাক করে দিয়েছিল।
সে সময় বলা হয়, এই অভিযানের প্রয়োজন ছিল। কারণ রাশিয়া এই অঞ্চল থেকে ইউক্রেনে নতুন করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। ইউক্রেন আরো বলেছিল, তারা ভবিষ্যতে আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ প্রতিরোধে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরির লক্ষ্যে রয়েছে।
কুরস্কে ইউক্রেনের আক্রমণটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিদেশি কোনো শক্তির রাশিয়ায় প্রথম স্থল আক্রমণ।
মস্কোও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল তখন। ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে দ্রুত অগ্রসর হয় এবং তার পর থেকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের শত শত বর্গমাইলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। রাশিয়া অবশ্য কিছু বসতি পুনরুদ্ধার করেছে।
কিছুদিন আগেই ইউক্রেন অভিযোগ করেছিল, রাশিয়ার সীমান্তে ইউক্রেনের সেনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সেনার লড়াই হয়েছে। স্পষ্ট হয়ে গেছে যে উত্তর কোরিয়ার সেনা রাশিয়াকে সরাসরি সাহায্য করছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তারা ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছে।
এর আগে ইউক্রেন অভিযোগ করেছিল, উত্তর কোরিয়া মিসাইল এবং গোলাবারুদ দিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করছে। যা নিয়ে জাতিসংঘেও আলোচনা হয়েছিল। এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার এই নতুন চুক্তি বিতর্ক আরো উসকে দেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনা নিয়োগের অভিযোগ ছিল ইউক্রেনের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তি আরো জোরদার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে কোনো একটি দেশে যদি সশস্ত্র আক্রমণ হয়, তাহলে এক দেশের সেনা অন্য দেশকে সাহায্য করবে।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম কেসিএনএ-এর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান কিম জং উন ইতিমধ্যেই ডিক্রি জারি করে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তির এই অংশটি গ্রহণ করেছেন। তার আগে রাশিয়ার পার্লামেন্ট চুক্তির এই অংশটি গ্রহণ করেছিল। রাশিয়ার পার্লামেন্টে কার্যত সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি পাস হয়েছে। চুক্তির পরিবর্ধিত অংশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সইও করেছেন। এর আগে জুন মাসে পুতিন উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। তখনই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তি সই হয়েছিল রাশিয়ার। যা নিয়ে বিশ্বমঞ্চে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্কিত চুক্তি আরো পরিবর্ধন করা হলো।
সূত্র : ডয়চে ভেলে,
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন