আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যে তুমুল প্রতিদন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচনের আগে সোমবারই ভোটারদের উদ্দেশে শেষ প্রচার চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। এ উপলক্ষে সোমবার পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে নির্বাচনি প্রচারণার শেষ ভাষণটি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস।
বিবিসি জানিয়েছে, জনসম্মুখে ভাষণের এই শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রচারণা আমেরিকার সকল কোনের সব শ্রেণির মানুষকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য বড়- আমরা শক্তি, আশাবাদ ও আনন্দ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। ঠিক সেভাবেই শেষ করছি এখন।’
তিনি তরুণ এবং নতুন ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদেরকে আমি বিশেষভাবে বলছি, আমি তোমাদের শক্তি দেখি এবং আমি তোমাদেরকে নিয়ে গর্বিত।’
আমেরিকার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জানেন যে, এবারের নির্বাচনে জয়ী হতে হলে তাকে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বরাবরের মতো এ বছরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে রয়েছে হামলা, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের উদ্বেগ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনি অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকা সুইং তথা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় বিশেষ নিরাপত্তামূলক সতর্কব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যেই দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসকে আজ দিনভর ভোট দেবেন মার্কিনীরা। তাদের উদ্বেগ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আলাবামা, অ্যারিজোনা, ডেলাওয়্যার, আইওয়া, ইলিনয়, নর্থ ক্যারোলাইনা, নিউ মেক্সিকো, ওরেগন, উইসকনসিন ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ওয়াশিংটন ডিসি, কলোরাডো, ফ্লোরিডা, হাওয়াই, নেভাদা, ওরেগন, পেনসিলভেনিয়া, টেনেসি, টেক্সাস ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ন্যাশনাল গার্ডের সেনা যেকোনো মুহূর্তে মোতায়েনের জন্য 'স্ট্যান্ড বাই' অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগে আছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এই উদ্বেগ থেকেই ভোটের দিন ও ভোটের পরে নিরাপত্তা জোরদার করতে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন।
৭ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলই নির্ধারণ করবে প্রেসিডেন্ট কে হবেন—এ বিষয়টি মোটামুটি মিমাংসিত।
এ কারণে এসব অঙ্গরাজ্যকে বাড়তি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে মার্কিন প্রশাসন।
এমনই এক দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য নেভাদা। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্পের সমর্থকরা সেখানে বিক্ষভে ফেটে পড়েছিলেন।
নেভাদার লাস ভেগাসের ভোট তালিকাভুক্ত করার কেন্দ্র (টেবুলেশন সেন্টার) ঘিরে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।
নেভাদার গভর্নর জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সীমিত আকারে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত ৬০ সদস্যের একটি দল সেখানে অবস্থান করছে।
অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সের মারিকোপা কাউন্টি ভোট তালিকাভুক্ত কেন্দ্রে একই ধরনের নিরাপত্তামূলক বেড়া তৈরি করা হয়েছে।
২০২০ সালে এই এলাকায় নির্বাচনি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলতে নিরাপত্তা মজবুত করতে কোনো কোনো ভোটকেন্দ্র ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।
নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসের একটি ভবন ঘিরে এমন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য সহিংসতা মোকাবিলায় অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে ড্রোন ও স্নাইপার নিয়ে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ।
মারিকোপা কাউন্টির পুলিশ কর্মকর্তা রাস স্কিনার বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রের ওপর নজর রাখবেন। এ কাজে তারা ড্রোন ব্যবহার করবেন।
সহিংসতা দেখা দিলে তা মোকাবিলার জন্য স্নাইপার প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া মোতায়েনের জন্য বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যও প্রস্তুত থাকবে।
অ্যারিজোনার নির্বাচনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিক্ষোভ বা সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ থেকে অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুল ও গির্জা এবার ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন