আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী অস্ত্র এবং আগের দুটি আক্রমণে ব্যবহৃত হয়নি, এমন অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে ইরান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন ইরানি ও আরব কর্মকর্তারা।
মিসরের এক কর্মকর্তা জার্নালকে জানান, কায়রোকে তেহরান হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে যে ২৬ অক্টোবরে ইরানে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ হবে 'শক্তিশালী ও জটিল। উল্লেখ্য, ইসরাইল দাবি করেছে, ১ অক্টোবর ইসরাইলে ইরানের হামলার বদলা নিতে তারা ২৬ অক্টোবর ওই হামলা চালিয়েছে।
এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেহেতু চারজন সৈন্য এবং একজন বেসামরিক নাগরিককে হারিয়েছি, তাই জবাব দেয়া দরকার।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইরানের সামরিক বাহিনী আসন্ন অভিযানে শরিক হবে। উল্লেখ্য, ১৩-১৪ এপ্রিল এবং ১ অক্টোবরে ইসরাইলি হামলায় ইরানি সেনাবাহিনী অংশ নেয়নি। ওই দুটি হামলা চালিয়েছিল ইসলামিক রেভ্যুলশানারি গার্ড কোর। অর্থাৎ আগের চেয়ে ভিন্ন মাত্রার হবে এই হামলা।
ওই কর্মকর্তা জানান, গতবারের চেয়ে এবার ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর আরো আগ্রাসীভাবে হামলা চালানো হতে পারে। তিনি বলেন, প্রজেক্টাইল নিক্ষেপের জন্য ইরাকি ভূমিও ব্যবহৃত হতে পারে।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৪৮ ঘণ্টায় ৫০ শিশু নিহত : ইউনিসেফ
গাজার উত্তরাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে ভয়াবহ হামলা চলেছে। এসব হামলা চালিয়ে ইসরাইল গত ৪৮ ঘণ্টাতেই জাবালিয়া এলাকায় ৫০ জনের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।
জাতিসঙ্ঘ শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থারটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল ওই বিবৃতিতে ভয়াবহ এ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
জাবালিয়া এলাকায় ইউনিসেফের কর্মীরা পোলিও টিকাদান কর্মসূচি চালানোর সময় গতকাল শনিবার হামলা চালানোর তথ্য পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সন্দেহজনক ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার জাবালিয়াতে হামলা চালায়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল আরো বলেন, পোলিও টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে গতকাল সকালের ওই হামলায় ইউনিসেফের কর্মীদের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যবশত এ ঘটনায় কোনো কর্মী আহত হননি।
এ ঘটনায় নিজেকে গভীরভাবে ব্যথিত উল্লেখ করে রাসেল আরও বলেন, গাজার জাবালিয়ায় বেসামরিক লোকদের ওপর যে নির্বিচারে হামলা চলছে। তার উদাহরণ হলো- পোলিও টিকাদানকেন্দ্র ইউনিসেফের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাবালিয়া, ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিক ও ইউনিসেফ স্টাফ সদস্যের ওপর হামলা গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলার গুরুতর পরিণতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’
এতে বলা হয়, ‘অন্যান্য আক্রমণে উত্তর গাজায় শিশু মৃত্যুর ভয়ঙ্কর স্তরের পাশাপাশি এই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই ভয়ানক যুদ্ধের অন্ধকারতম সময়ের মধ্যে আরেকটি অন্ধকার অধ্যায় রচনা করেছে।’
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে- আবাসিক ভবনসহ বেসামরিক অবকাঠামো, মানবিক কর্মী ও তাদের যানবাহনগুলোকে সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে। বাস্তুচ্যুতি বা সরিয়ে নেয়ার আদেশ বিবাদমান কোনো পক্ষকে কোন নির্দিষ্ট এলাকার সমস্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বিবেচনা করার অনুমতি দেয় না।’
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তবুও এই নীতিগুলি বারবার লঙ্ঘিত করা হচ্ছে। যার ফলে হাজার হাজার হতাহত হচ্ছে এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা থেকে এই শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে।’
ইউনিসেফ জানায়, ‘মানবিক কর্মীসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ এবং গাজার বেসামরিক অবকাঠামো- যা অবশিষ্ট আছে, সেগুলোর ওপর হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। উত্তর গাজার ফিলিস্তিনি জনগণ, বিশেষ করে শিশুরা রোগ, দুর্ভিক্ষ ও চলমান বোমা হামলায় মারা যাওয়ার আসন্ন ঝুঁকিতে রয়েছে।’
‘ইউনিসেফ ইসরাইলকে তার স্টাফ সদস্যের ওপর হামলার আশেপাশের পরিস্থিতিতে অবিলম্বে তদন্তের জন্য এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিচ্ছে।’
‘ইউনিসেফ সদস্য দেশগুলিকে শিশুদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে তাদের প্রভাব ব্যবহার করার আহ্বান জানায়।’
সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল ও এএফপি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন