যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার শেষ হতে বাকি আর মাত্র এক দিন (সোমবার)। প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের কাছে ক্লান্তিহীনভাবে ছুটছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কমলা ও ট্রাম্প গত কয়েক দিন ধরেই বিশেষ করে দোদুল্যমান সাতটি অঙ্গরাজ্যে চষে বেড়াচ্ছেন। ব্যতিক্রম ছিল না গতকাল শনিবারও। স্মরণকালের সবচেয়ে টানটান উত্তেজনার এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ভোটারদের প্রতি রিপাবলিকান রাজনীতির ‘পোড়ামাটি নীতি’ উল্টে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মঙ্গলবারের ‘ইলেকশন ডে’ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ভোটারদের আগাম ভোট দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে, বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে ৭৫ মিলিয়ন (৭ কোটি ৫০ লাখ) ভোটার তাঁদের রায় অর্থাৎ ভোট দিয়ে ফেলেছেন।
আমাদের সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের অধ্যায়গুলো চূড়ান্তভাবে উল্টে দেওয়ার এক সুযোগ এ নির্বাচন। ট্রাম্প একে অপরের মধ্যে বিভক্তি ও ভয় তৈরির চেষ্টার পেছনে তাঁর সবটা সময় ব্যয় করেছেন।
কমলা হ্যারিস, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী
ভোটারদের মতো এ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই আবার নির্বাচিত হন, সেটিই দেখার অপেক্ষায় তাঁরা। সর্বশেষ ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধিয়েছিলে ট্রাম্প।
গতকাল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী আক্ষরিকভাবেই একই পথ অতিক্রম করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে নিয়ে তাঁর সরকারি উড়োজাহাজ ‘এয়ার ফোর্স টু’ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের শার্লটে বিমানবন্দর টরমাক ভাগাভাগি করে নেয়।
দুই নেতাই এদিন দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যটিতে জনসমাবেশে বক্তব্য দেন। এর বাইরে জর্জিয়ায় সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন কমলা। একই দিন প্রচারের অংশ হিসেবে ভার্জিনিয়ায় যাত্রাবিরতি করেন ট্রাম্প।
নতুন এক জরিপে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে কমলার পক্ষে সমর্থন বেশ জোরাল হতে দেখা গেছে। এখানে ট্রাম্পের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অঙ্গরাজ্যটিতে ২০২০ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে সহজেই ট্রাম্প জিতেছেন।
প্রচারের ধারাবাহিকতায় আজ রোববারও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে কমলা ও ট্রাম্পের হাজারো সমর্থকের সামনে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। কমলা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন আর সমর্থকদের নিয়ে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ করবেন ট্রাম্প।
এদিকে, অধিকাংশ জনমত জরিপের ফলাফলে দুই প্রার্থীর জনসমর্থন খুব কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। এতে নির্বাচনে তাঁদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে নতুন এক জরিপে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে কমলার পক্ষে সমর্থন বেশ জোরাল হতে দেখা গেছে। এখানে ট্রাম্পের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অঙ্গরাজ্যটিতে ২০২০ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে সহজেই ট্রাম্প জিতেছেন।
নারী অধিকার ও কটু বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা
কমলা–সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য অংশ হলেন নারী ভোটাররা। সুপ্রিম কোর্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া বিচারপতিরা মার্কিন নারীদের কয়েক দশক ধরে চলা গর্ভপাত অধিকারের পাল্টা রায় দেন। এতে নারী ভোটারদের অনেকে ক্ষুব্ধ।
কমলা হ্যারিস ‘কম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন’ ও ‘মূর্খ’। তিনি জিতলে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ডেকে আনবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, রিপাবলিকান প্রার্থী
এ প্রসঙ্গ টেনে কমলা জর্জিয়ার আটলান্টায় সমাবেশে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবেন। ট্রাম্পকে ‘ক্রমবর্ধমান অস্থিরতায় ভোগা, প্রতিশোধপরায়ণ ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাশালী হওয়ার প্রত্যাশী’ একজন ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
কমলা আরও বলেন, ‘আমাদের সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের অধ্যায়গুলো চূড়ান্তভাবে উল্টে দেওয়ার এক সুযোগ এ নির্বাচন। ট্রাম্প একে অপরের মধ্যে বিভক্তি ও ভয় তৈরির চেষ্টার পেছনে তাঁর সবটা সময় ব্যয় করেছেন।’
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প নানা তিক্ত বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ভার্জিনিয়ার সালেমে তিনি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন এ বলে যে, ‘আমি আজ এখানে এসেছি, সবার জন্য আশার এক বার্তা নিয়ে।’ তবে, কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় দেওয়া নিজ বক্তব্যে ফেরত যান।
এ সময় কমলাকে ‘কম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন’ ও ‘মূর্খ’ বলে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প। কমলা জিতলে তিনি দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ডেকে আনবেন বলেও মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে ট্রাম্প উপস্থিতি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি চাকরি এবং সম্ভবত আপনাদের বাড়িঘর ও পেনশন হারাতে চান?’
এর আগে ট্রাম্প নারীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলেছেন, তিনি যদি হোয়াইট হাউসে না যান, তবে সহিংস অপরাধীরা তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেবেন।
কমলা ও ট্রাম্পের ব্যস্ত প্রচার আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। তাঁদের সমাবেশগুলো চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। এর মধ্যে মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে সমাবেশ করবেন ট্রাম্প আর পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় সমাবেশ করবেন কমলা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন