লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গোষ্ঠীটির নতুন প্রধান হয়েছেন নাইম কাসেম। তিনি গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গে রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গোষ্ঠীটির নতুন প্রধান হয়েছেন নাইম কাসেম। তিনি এর আগে গোষ্ঠীটির ডেপুটি ছিলেন। তাকে সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, কাসেম তার ‘হিজবুল্লাহর নীতি ও লক্ষ্যের প্রতি আনুগত্যের কারণে’ এ পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, গোষ্ঠীটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তাকে হিজবুল্লাহ এবং এর ইসলামী প্রতিরোধ অন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার এই মহৎ মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন।
৭১ বছর বয়সী হিজবুল্লাহর এ নেতা এর আগে দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় পণ্ডিতদের একজন।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নাবাতিয়েহ শহরের কিফার কিলা গ্রামে নাইম কাসেম জন্মগ্রহণ করেন। ওই গ্রামে গত অক্টোবর থেকে শুরু করে অসংখ্যবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শিয়া রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত নাঈম কাশেম।
১৯৭০-এর দশকে তিনি প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সাদরের দল ‘বঞ্চিতদের আন্দোলনে’ যোগ দেন। পরে দলটি লেবাননের শিয়া দল ‘আমাল আন্দোলনের’ সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর আমাল ছেড়ে তিনি ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। তিনি দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মীয় গুরু হিসেবে যোগ দেন। কাশেমের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ সম্মানের অধিকারী আয়াতুল্লাহ মোহাম্মাদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ। পরে কাশেম নিজেও বেশ কয়েক দশক বৈরুতে ধর্ম শিক্ষার ক্লাস নিয়েছেন।
নাইম কাসেম ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নিযুক্ত হন। তৎকালীন প্রধান আব্বাস আল মুসাওয়ি তাকে এ পদে নিযুক্ত করেন। এর এক বছর পর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন।
মুসাওয়ি নিহত হওয়ার পর হাসান নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নাইম কাসেম। গত এক বছর ধরে তিনি গোষ্ঠীটির অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় তিনিই কথা বলে থাকেন।
উল্লেখ্য, হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবনধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকি-টকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন