ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে শনিবার সতর্ক করেছেন বিশ্বনেতারা।
ইরান–সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান ছিলেন নাসরুল্লাহ। গত শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি শহরতলিতে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালিয়ে নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল।
নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে আরও তীব্র করেছে।
হিজবুল্লাহপ্রধানের হত্যাকাণ্ডকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আর কোন দেশ কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক।
ইরান
ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নাসরুল্লাহর মৃত্যু ‘তাদের ধ্বংস ডেকে আনবে’। রেজা আরেফের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এ খবর প্রকাশ করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নাসরুল্লাহ যে কাজ করছিলেন, সেটা তাঁর মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি লিখেছেন, ‘তাঁর (নাসরুল্লাহর) পবিত্র লক্ষ্য কুদস (জেরুজালেম) মুক্ত করা হবে, ইনশা আল্লাহ।’
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিজবুল্লাহকে অর্থ এবং অস্ত্র দেয়। নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
যুক্তরাষ্ট্র
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘নাসরুল্লাহর মৃত্যু তাঁর হত্যাকাণ্ডের শিকার বহু মানুষের জন্য একটি ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ। তাঁর শিকারদের মধ্যে হাজারো মার্কিন, ইসরায়েলি ও লেবাননের বেসামরিক লোকজনও রয়েছেন।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, হিজবুল্লাহ, হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর সেই অধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনও আছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘নাসরুল্লাহ একজন সন্ত্রাসী ছিলেন, তাঁর হাতে মার্কিনদের রক্তও লেগে আছে।’
‘হিজবুল্লাহ, হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে’ এবং এর প্রতি সব সময় তাঁর সমর্থন রয়েছে বলেও জানান ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের প্রভাবশালী রিপাবলিকানরাও নাসরুল্লাহকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসীদের একজন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সন্দেহাতীতভাবে ইসরায়েলের সম্প্রতি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং এখনই লেবাননে সামরিক অভিযান বন্ধ করার তাগিদ দিচ্ছি।’
এই হত্যাকাণ্ড (নাসরুল্লাহ) ওই অঞ্চলের জন্য ‘দুঃখজনক’ পরিণতির কারণ হতে পার এবং ইসরায়েলকে এর ‘সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করতে হবে’ বলেও ওই বিবৃতিতে বলা হয়।
জার্মানি
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এআরডি টেলিভিশনকে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড ‘পুরো লেবানন অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার হুমকি তৈরি করেছে। যেটা কোনোভাবেই ইসরায়েলের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য ভালো না’।
কানাডা
নাসরুল্লাহকে ‘একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা’ বলে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বলেছেন, তারা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষদের হত্যা করেছে। ফলে ওই অঞ্চলজুড়ে অসহনীয় দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
তিনি বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষায় আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন। কঠিন এই সময়ে তিনি সবাইকে শান্ত ও সহনশীল থাকার কথাও বলেছেন।
যুক্তরাজ্য
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্সে এক পোস্টে লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রক্তপাত বন্ধ করতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি। লেবানন ও ইসরায়েলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় কূটনৈতিক সমাধান।’
ফ্রান্স
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট ইসরায়েলকে ‘এখনই লেবাননে তাদের হামলা বন্ধ করতে’ বলেছেন।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে অন্যান্য পক্ষ, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে, যেটা ওই অঞ্চলকে আরও বিশৃঙ্খল করতে তুলতে পারে।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় বৈরুতের পরিস্থিতিতে যে নাটকীয় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে’, তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। যদিও গাজায় সামরিক অভিযান নিয়ে ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, লেবাননে ‘গণহত্যা’ হয়েছে। তবে তিনি সরাসরি নাসরুল্লাহর নাম নেননি।
সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়লাস বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে বলেছেন, ‘পুরো অঞ্চলে এই উত্তেজনা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে। ওই অঞ্চলে একটি সত্যিকারের যুদ্ধ শুরু হওয়া এড়িয়ে যেতে আমরা সব পক্ষকে প্রজ্ঞা এবং সংযম প্রদর্শন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন