রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার সদস্য বাড়ানোর আদেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ আদেশের মাধ্যমে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার দিকে এক ধাপ এগোলেন সাবেক কেজিবি প্রধান। খবর রয়টার্সের।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে তৃতীয়বারের মতো সেনাবাহিনী সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিলেন পুতিন।
সোমবার ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আদেশের কপিতে দেখা যায়, সশস্ত্র বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ২৩ লাখ ৮০ হাজারে উন্নীত করার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। এরমধ্যে সক্রিয় সদস্য থাকবে ১৫ লাখ সেনা।
২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুতিন দু’বার সেনা সংখ্যা বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছেন। প্রথমবার ১ লাখ ৩৭ হাজার ও দ্বিতীয়বার ১ লাখ ৭০ হাজার।
নেতৃস্থানীয় সামরিক কৌশল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) জানিয়েছে, মোতায়েনযোগ্য সক্রিয় সেনা সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে রাশিয়া। তারা কেবল চীনের থেকে পিছিয়ে থাকবে, যাদের সক্রিয় সদস্য আছে ২০ লাখের কিছু বেশি।
ইউক্রেনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি জনসংখ্যার দেশ রাশিয়া লোভনীয় চুক্তির মাধ্যমে সফলতার সঙ্গেই স্বেচ্ছাসেবকদেরকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়ে আসছিল। এরপরও তারা ইউক্রেন যুদ্ধে জানমালের মারাত্মক ক্ষতি এড়াতে পারছে না। আর যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
কোনও পক্ষই তার ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করে না । উভয়েরই দাবি, এগুলো সামরিক গোপনীয় বিষয়।
রুশ পার্লামেন্টারি নিম্নকক্ষ প্রতিরক্ষা কমিটর সভাপতি আন্দ্রেই কারতাপোলোভ বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত পুরো বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার অংশ। চলমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ‘সাবেক বৈদেশিক অংশীদারদের’ আচরণের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেছেন, আমাদের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের কথাই চিন্তা করুন। তারা ন্যাটতে যোগ দিয়েছে। এজন্য সে অঞ্চলে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। তাই, বাহিনীতে সদস্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হতে পারে। এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সেনা সদস্য তো বৃদ্ধি করতেই হবে।
এদিকে বাড়তি সেনা নিয়োগের ব্যয় বহন করার জন্য মস্কো তৈরি কিনা এমন প্রশ্নও তুলেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান কারনিজি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর বিশেষজ্ঞ দারা ম্যাসিকট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, বাজেট ঘাটতি থাকলেও ১৫ লাখ লোক নিশ্চিত করার অনেক উপায় আছে। তবে সেগুলো মস্কোর পছন্দ হবে না। ভাবনার বিষয় হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির সক্ষমতা ক্রেমলিনের রয়েছে কিনা।
সেনাবাহিনীতে লোকবল বৃদ্ধিসংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত সম্বলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন ম্যাসিকট। সেখানে দেখা গেছে, অভীষ্ট অর্জনে অজনপ্রিয় পদ্ধতিও বিবেচনায় রেখেছে ক্রেমলিন। যেমন বাধ্যতামূলক যোগদানের আওতা বৃদ্ধি অথবা সেনাবাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে চলমান প্রক্রিয়া, স্বেচ্ছাসেবক ভিত্তিতে নিয়োগ, আপাতত কাজ করছে। কিন্তু সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন