যুক্তরাষ্ট্র যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে, সেই আবহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আন্তর্জাতিক গাজা সহায়তা সম্মেলনে যোগ দিতে জর্ডানে যাওয়ার আগে ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার ইসরাইলে বেনি গ্যান্টজ এবং ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সারেন। গ্যান্টজের সঙ্গে তার বৈঠকে ব্লিঙ্কেন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য হামাসকে দায়ী করেন।
বৈঠকের বর্ণনা দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দু পক্ষ একটি জিম্মি চুক্তির অংশ হিসাবে গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে যা সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা জুড়ে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে। গ্যান্টজ, যিনি ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং রবিবার বিরোধী দলে যোগ দিয়েছেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রধান অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখা হয়। শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিকের পক্ষে বিদেশী সফরে বিরোধী ব্যক্তিদের সাথে দেখা করা বিরল, যদিও তিনি ইসরাইলে পূর্ববর্তী বেশ কয়েকটি সফরে গ্যান্টজ এবং ল্যাপিডের সঙ্গে দেখা করেছেন। বাইডেন প্রশাসন তার গাজা নীতি নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করার মাঝেই মঙ্গলবারের এই আলোচনা সামনে এলো। মার্চ মাসে, ব্লিঙ্কেন এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারাও ওয়াশিংটন ডিসিতে গ্যান্টজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যাকে কিছু বিশ্লেষক নেতানিয়াহুর প্রতি একটি বার্তা হিসাবে দেখেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা গাজার জন্য একটি সংঘাত-পরবর্তী পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দিয়ে আসছেন। কয়েক মাস ধরে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করার পর যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা এবার চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক।যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন যে, হামাস চুক্তির পথে ‘একমাত্র’ বাধা, নেতানিয়াহু হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ব্লিঙ্কেন সোমবার গভীর রাতে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন সমর্থিত প্রস্তাবের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেননি যে তিনি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন, যদিও তার ডানপন্থী মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা এটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং চুক্তিটি গৃহীত হলে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছেন।
হামাস বলেছে যে, তারা এই প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন এবং ইসরাইলের কাছ থেকে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি করছেন। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন পরিকল্পনার ভিত্তিতে ‘অবিলম্বে, পূর্ণ যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবটিতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে রয়েছে বন্দি বিনিময়। দ্বিতীয় ধাপে সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনা এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত। তৃতীয় ধাপে অঞ্চলটি পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন