পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। এবারের নির্বাচনেও ‘অপ্রতিরোধ্য’ প্রতিনিধি। কারণ সেনাবাহিনীর পছন্দের শীর্ষে ছিল তার দল পাকিস্তান মুসলীম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। পাশপাশি দলীয় প্রচার-প্রচারণায় জনগণের অগাধ ভালোবাসা ছিল দৃশ্যমান। সকলের মুখেই ছিল সমর্থনের ডাক। কিন্তু শেষ বেলায় এসে হিসেব মেলেনি। এমনটাই বলছে ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফল। মানুষের মন জয় করতে পারেনি পিএমএল-এন। এমনকি ক্যান্টনম্যান্ট আর্শীবাদের পরও ফেইল দলের শীর্ষনেতা নওয়াজ শরীফ। দেশ চালানো হর্তাকর্তাদের পছন্দের পরও কেন এমন বেহাল দশা পিএমএল-এনের? কেনইবা অধিকাংশের মনে জায়গা করতে পারলেন না তারা? সোমবার আল-জাজিরার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
জনমনে পিএমএল-এনের জায়গা না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ইমরান খানের জনপ্রিয় সমর্থনকে অবমূল্যায়ন করা। এ বিষয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালমান ঘানি বলেন, যখন একজন ব্যক্তি নির্যাতিত হয়, তখন তাদের সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর আগে নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখেছি। যাদের দেয়ালে ঠেলে দেয়া হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি প্রতিশোধ নেয়। পিএমএল-এন এটা বুঝতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, একবারও তারা (পিএমএল-এন) পিটিআই-এর সহিংসতা ও নিপীড়নের নিন্দা করেনি। এটিই পিএমএল-এনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ইতিহাসের আরও কিছু পুরোনো অধ্যায় তুলে ধরা হয় যার ফলে পিএলএম-এনের জন্য জনগণের সমর্থন ততোটা দেখা যায়নি। ২০২২ সালেও পিটিআই সরকারের পূর্ণ মেয়াদ নিশ্চিত করতে দেয়নি পিএমএল-এন।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমরান খানকে সংসদীয় অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল পিএমএল-এন। নওয়াজ শরিফ একাধিক দুর্নীতি মামলায় যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকায় ক্ষমতায় আসায় তার শাহবাজ শরিফ ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শাহবাজ শরিফের সমস্ত মনোযোগ তার বড় ভাইয়ের বিরদ্ধে মামলার নিষ্পত্তির দিকেই ছিল। সেসময় সেনাসমর্থনে জোট সরকার পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিএম) ক্ষমতায় আসে। সেসময় দেশটি ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালমান ঘানি বলেন, পিডিএম-এর ১৬ মাসের শাসন পিএলএম-এনের প্রায় অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করেছে। এই মেয়াদে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা গেছে, তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংকসহ সর্বত্র জনসাধারণকে আঘাত করেছে।
উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসীই ছিল নওয়াজের দল পিএমএল-এন। ভোটের পর বিজয়ী বক্তৃতাও তৈরি করে রেখেছিল নেতারা। ভেবেছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে একক সরকার হয়ে পাঁচ বছরের সরকার গঠন করবে। তবে ভোট গণনার পরপরই হতবাক হয়ে যায় দলটি। কেননা এবারের নির্বাচনে অধিকাংশ জনগনই তাদের সমর্থন দেখিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফে (পিটিআই)।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচনের বিশেষজ্ঞ মজিদ নিজামী বলেন, ‘ভোটিংয়ের ফলগুলো আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এটি দলটিকে হতবাক এবং বিস্মিত করেছে যে কারণে তারা প্রায় ১২ ঘন্টা সম্পূর্ণ নীরব ছিল। দলটি যে ফলাফল আশা করেছিল তা পূরণ হয়নি। তারা ভেবেছিল যে তারা পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে ৮৫ শতাংশের বেশি আসন অর্জন করবে, কিন্তু প্রাথমিক গণনায় দেখায় যে তারা সবেমাত্র ৫০ শতাংশ আসন পেয়েছে’। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও নির্বাচনে শরিফ পরিবার থেকে জয়ী হয়েছে নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। পিপি-১৫৯ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। পাঞ্জাব বিধানসভা আসন পিপি-১৫৯ এবং লাহোর-১৪-এর নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার/ইসিপি কর্তৃক জারি করা ফলাফল অনুসারে, মরিয়ম নওয়াজ ২৩ হাজার ৫৯৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে তার চাচা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন সভাপতি শাহবাজ শরিফ দুই আসনে সাফলতা অর্জন করেছেন। লাহোরের এনএ-১২৩ আসন এবং পিএ-১২৮ থেকে ৬৩ হাজার ৯৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। তবে এর মধ্যে মরিয়ম নেওয়াজের জয় নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। লাহোর হাইকোর্টে (এইচএলসি) মরিয়ম নওয়াজ, খাজা আসিফ, হামজা শাহবাজ এবং অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচনে সাফল্যের বিরুদ্ধে শুনানি হয়েছে। সেসময় কোর্টে এ নিয়ে বেশ বাকবিতন্ডাও দেখা দেয় আইনজীবী দের মধ্যে। শুনানির সময়, পিটিশনকারী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদ ফারুকের আইনজীবী আফতাব বাজওয়া বলেন, তারা ‘রাণী’বলে উপহাস করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন