সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) জন বোল্টন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের প্রশংসা করেছেন, ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং নয়াদিল্লির উদীয়মান বৈশ্বিক ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মার্কিন রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামিনারের জন্য লেখায় বোল্টন বিশ্বমঞ্চে প্রভাব জাহির করতে ভারতের ইচ্ছার প্রমাণ হিসেবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ প্রচেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
বিআরআই চীনের একটি বিশাল অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রকল্প। এশিয়াজুড়ে ও এর বাইরে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রসারিত করার সম্ভাব্যতার বিষয়ে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে প্রকল্পটি।
বোল্টন লিখেছেন, ‘সন্দেহের নেই যে ভারত তার বিশাল ইন্দো-প্যাসিফিক পরিধি বরাবর চীনের আধিপত্যবাদী আকাঙ্খাগুলোকে ধারণ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হবে।’
বোল্টন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে এনএসএ হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি কাতারে সাবেক ভারতীয় নৌ সদস্যদের সঙ্গে জড়িত চলমান মামলার ওপরও আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, এই মামলাটি নিঃসন্দেহে ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সম্পর্ক এবং তাদের ঐতিহ্যগত মিত্রদের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা সম্পর্কিত বিষয়ে সহযোগিতা করার ইচ্ছাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এ ছাড়া তিনি লিখেছেন, ‘হামাসের সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে এবং ইরানের পুতুল নেতাদের সীমাবদ্ধ করতে ইসরায়েলের বর্তমান যুদ্ধের প্রভাব ভারতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, উভয় দেশের জন্য সুযোগের উন্মোচন। কিন্তু পরিস্থিতি একটি জটিল ও কঠিন অঞ্চলের ঝুঁকিকেও উপস্থাপন করে।’
কলম্বোতে একটি গভীর জলের কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ৫৫৩ মিলিয়ন ডলার ঋণের সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্য কৌশলগত ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছেন বোল্টন। তিনি এই প্রকল্পে আদানি গ্রুপের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেছেন।
সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘বন্দর নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় গভীর দক্ষতাসহ ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প সংস্থা আদানি গ্রুপ ভারতের বেসরকারি খাত এবং মার্কিন সরকারের মধ্যে এই প্রথম উল্লেখযোগ্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় প্রকল্পের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিক, যা চীনের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগী। কলম্বো উদ্যোগে একটি অগ্রগ্রামী বেসরকারি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে দলবদ্ধ হওয়া মার্কিন-ভারতীয় সম্পদকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবহার করার একটি নাটকীয় উদাহরণ।’
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আরবের অংশীদারদের মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন বোল্টন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বিস্তৃত ভারতীয় ভূমিকা ও অংশীদারিত্ব উভয় দেশের যৌথ জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
বোল্টন বলেছেন, ‘যেমন আদানি গ্রুপের কলম্বো বন্দর প্রকল্প মার্কিন আর্থিক সংযোগে শক্তিশালী ও চীনের আধিপত্যবাদী আকাঙ্ক্ষার মোকাবেলার জন্য ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের আরব অংশীদারদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য বৃদ্ধি করছে।
বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বৃহত্তর ভারতীয় ভূমিকা ও সহযোগিতা উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।’
সূত্র : এনডিটিভি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন