গাজার যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেছে। শুক্রবার সকাল থেকেই ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছে ইসরাইল। প্রথম দিনেই ১৭৫ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আবার শুরু করেছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আরো আগে থেকেই যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে বলে আসছিল। ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সশস্ত্র পদক্ষেপের কথাই কেবল ভাবছিল। আর সামরিক বাহিনীর এই মনোভাব প্রতিধ্বনিত করছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও যুদ্ধবাজ। তবে তিনি শুরু থেকেই সার্বিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আর এর ফলে কট্টর সামরিকবাদী এবং সাবেক ক্যারিয়ার সৈনিক গ্যালান্টের হাতেই যুদ্ধের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত গ্যালান্ট ছিলেন সক্রিয় জেনারেল। তিনি নৌকমান্ডো হিসেবে ক্যারিয়অর শুরু করেছিলেন। ২০১০ সালে গাজায় ইসরাইলি অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। উগ্র কথাবার্তার বলার জন্যও তিনি পরিচিত। চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি হিজবুল্লাহকে হুঁশিয়ারি দেয়ার সময় 'লেবাননকে প্রস্তর যুগে' ফিরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরুতে তিনি ইসরাইলের শত্রুদেরকে 'মানব পশু' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
এমনকি চার দিনের মূল যুদ্ধবিরতির শেষ দিনে তথা সোমবারও তিনি যুদ্ধ শুরুর জন্য তার অফিসারদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আবার যুদ্ধ করতে হবে। একই শক্তি কিংবা আরো বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আমরা পুরো উপত্যকায় যুদ্ধ করব।
যুদ্ধের ব্যাপারে একমত থাকলেও নেতানিয়াহু আর গ্যালান্টের লক্ষ্য এখন ভিন্ন। নেতানিয়াহু এখন কেবল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এ কারণে যুদ্ধকেই তিনি বেছে নিয়েছেন।
অন্যদিকে গ্যালান্ট মনে করেন, যুদ্ধ আবার শুরু হলে তার সামরিক বাহিনী আরো বেশি সাফল্য লাভ করবে। তবে তিনি সম্ভবত এটাও জানেন যে যুদ্ধের সময় জাতীয় নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার ঐতিহ্য ইসরাইলে না থাকলেও নেতানিয়াহু ক্রমবর্ধমানভাবে কেবল তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হাতে নয়, সাবেক সহকর্মীদের সমালোচনাতেও বিদ্ধ হচ্ছেন।
ফলে ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে, নেতানিয়াহুকে কেবল ৭ অক্টোবরের হামলা রুখতে ব্যর্থতার কারণেই নয়, বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজনের জন্যও চড়া মূল্য দিতে হবে। ফলে যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র নেতানিয়াহুর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।
আর গ্যালান্ট ভালো করেই জানেন, নেতানিয়াহুর ক্যারিয়ার শেষ হলে লিকুদ পার্টিকে নতুন নেতা নির্বাচন করতে হবে। আর ইসরাইলিরা সাধারণভাবে সাবেক অফিসারদেরই পছন্দ করে। ফলে এই যুদ্ধ তাকে এগিয়ে দেয়ার সুযোগ দিচ্ছে।
ফলে যুদ্ধ থামাতে রাজি নন নেতানিয়াহু বা গ্যালান্ট। যুদ্ধেই রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থও।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন