জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ইরফান আটক
চাঁদপুরের মেঘনায় সার বোঝাই কার্গো জাহাজে সাত খুনের ঘটনা ইরফান নামে একজনকে আটক করেছে র্যাব। বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লায় সংবাদ সম্মেলন করবে র্যাব-১১।
হাইমচর থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে খুনের ঘটনায় মামলা করেন এমভি আর বাখেরা কার্গো জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ। এ মামলায় এমভি মুগনির জাহাজের মাষ্টার বাচ্চু মিয়াসহ নয়জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বাদী ঢাকার দোহারের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মাহবুব মোর্শেদ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৯৬ ও ৩৯৭ ধারায় বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত রবিবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার জেটি থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে ইউরিয়া সার নিয়ে মোট নয়জন রওনা হন।
সোমবার বিকেলে জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে জাহাজের মাষ্টার মো. সালাহউদ্দিনসহ আরো কয়েকজন স্টাফকে মুঠোফোনে কল দিয়েও সাড়া পাননি তিনি। এ সময় তার মালিকানাধীন অপর জাহাজ একই পথ পাড়ি দেওয়ায় এমভি মুগনি নামে ওই জাহাজের মাষ্টার বাচ্চু মিয়াকে খোঁজ রাখতে মুঠোফোনে জানান।
পরে সোমবার দুপুর ১২টায় চাঁদপুরে হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে ঈশানবালা খালের মুখে সার বোঝাই এমভি আল বাখেরাকে অবস্থান করতে দেখেন মাষ্টার বাচ্চু মিয়া।
এক পর্যায়ে ওই জাহাজের কাছে পৌঁছে বাচ্চু মিয়া তাতে আরোহন করে দেখতে পান এমভি আল বাখেরার প্রায় স্টাফ মৃত ও অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বিষয়টি মাহবুব মোর্শেদকে জানানো হলে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন। পরে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রিজার ও সুকানি রুমে তিনজনকে মৃত, ব্রিজ রুমে তিনজনকে রক্তাক্ত এবং ড্রাইভার ও মাষ্টার রুমে আরো দুইজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের রক্তাক্ত যে তিনজন ছিলেন, তাদের মধ্যে এখন কেবল জুয়েল নামে একজন বেঁচে আছেন। জুয়েলকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।
মামলায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেকের মাথা, গলা ও মুখমন্ডল রক্তাক্ত জখম ছিল। তবে আটজনের এমন করুণ পরিণতি হলেও ইরফান নামে একজন রহস্যজনক কারণে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। যাকে এরইমধ্যে বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে আটক করেছে র্যাব-১১ কুমিল্লা।
মামলায় ওই আটজনের নাম ও ঠিকানা থাকলেও নিখোঁজ ইরফানের কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া সাতজন খুন হলেও জাহাজের কোনো কিছু খোয়া যায়নি।
মামলার বিষয়ে হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চাঁদপুর সদরের হরিণা ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা তদন্ত করতে এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, কোস্ট গার্ড জেলা ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে আলাদাভাবে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার শিকার কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরা ঘটনাস্থলে পড়ে আছে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় দাফন সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন ২০ হাজার এবং নৌ পুলিশ ১০ হাজার টাকার সহায়তা দেয়।
নিহতদের মধ্যে দুজনের ফরিদপুর, দুজনের নড়াইল, দুজনের মাগুরা ও একজনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন