প্রার্থীর সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতা না দেখে শুধু মার্কা দেখে ভোট দেওয়ায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ পায়। এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্যা গালিব।
তিনি বলেন, ‘মার্কা দেখে ভোট দেওয়া আমাদের দেশের পুরোনো কালচার। প্রার্থী কে, তার যোগ্যতা-দক্ষতা কেমন, সৎ কি না, তা না দেখে নৌকা-ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেন। ভোটারদের এমন মানসিকতায় রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্য করতে ম্যান্ডেট পেয়ে যায়। ফলে এ দোষ শুধু দলগুলোর নয়, ভোটারেরও।’
‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি) এ সেমিনার আয়োজন করে।
ড. মির্যা গালিব বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যদি নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে এগোতে চাই, তাহলে কেউ এ গণআন্দোলন একার বলে দাবি করবেন না। যার যতটুকু কৃতিত্ব ও অবদান, তা উদারচিত্তে তাকে দেবেন। এ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় চরিত্র হলো- এখানে তরুণদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল; স্বতস্ফূর্ত ছিল। এটা অসাধারণ ও অভূতপূর্ব নতুন অভিজ্ঞতা।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাঠে অগ্রভাগে থেকে লড়াই করা তরুণদের কারও বয়স ১৫ বছর, কারও ২০, কারও ২৫ বছর। ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছি- যারা অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের ওপরে।’
তরুণদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ দেখার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রশিবিরের সাবেক এ নেতা বলেন, ‘একের পর এক অর্থনৈতিক ধাক্কা খাওয়ার পরও হাসিনা কীভাবে টিকে ছিলেন, তা নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছিল- বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তির কথা। সেই তরুণরাই যখন ফ্রাস্টেটেড (হতাশাগ্রস্ত) হয়ে রাস্তায় নেমে এলো, তখন হাসিনার বিদায় ঘণ্টা বেজে গেলো। ফলে আগামী দিনের রাজনীতিতে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
মির্যা গালিব বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে ভাবতে হবে, গবেষণা করতে হবে; তরুণরা কী চায়? তারা যা চায়, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে দলগুলোকে তাদের এজেন্ডা ঠিক করতে হবে। তাহলে সেই দল আগামীতে ভালো করবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোতে ৫০ শতাংশ তরুণ নেতৃত্ব নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের দলের মধ্যে তরুণদের জন্য জায়গা করে দিতে হবে। শুধু নামমাত্র জায়গা নয়, নেতৃত্বের জায়গায় তাদের রাখতে হবে। বিএনপি ও জামায়াত যে বড় দুটি রাজনৈতিক দল, তাদের যে সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী পরিষদ; সেখানে ৫০ শতাংশ সদস্যের বয়স ৫০ বছরের কম হওয়া উচিত।’
সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. ফয়জুল হক, জবান’র সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, বিডকোয়ার সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুইয়া, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সাঈদ আহমেদ সরকার প্রমুখ।
ড. ফয়জুল হক বলেন, দেশের এ সময়ে ৫ আগস্টের আগের চেয়েও বেশি ঐক্য প্রয়োজন। যুবকদের বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।
সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হতে হবে জাতীয়তাবাদ ও ধর্মের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে দলীয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুবসমাজের সম্পৃক্ততা বাড়ানো অপরিহার্য।
সভাপতির বক্তব্যে সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে শুধু নতুন একটি দল করা নয়। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক কালচার ডেভেলপ করতে হবে। রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তনের চিন্তা করতে হবে। শুধু দল গঠনকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বললে কিছু দিন পর হারিয়ে যেতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন