নীলফামারীতে কৃষকের কাছ থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে পাইকাররা কিছুটা দূরে খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এই দূরত্বের মধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে দাম। কৃষকদের অভিযোগ, তারা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি।
জানা গেছে, নীলফামারীতে এ বছর নানা জাতের বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বেগুনসহ অন্য সবজির পাইকারি বাজার বসে জেলা শহরের আনসার ক্যাম্প সবজি বাজারে। প্রতিদিন সকাল ৬টায় বসে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এ বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মণ বেগুন যায় জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে।
Bagun55
১৫-২০ টাকা দরে প্রতি কেজি বেগুন কৃষকের কাছে থেকে কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা (আড়তদাররা)। তবে এই বেগুনই ১০০ গজ দূরে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। হাত বদলেই প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মাঝের এই ব্যবসায়ীরা।
শুধু বেগুনেই নয়, আলু, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটি, শিম, ধনেপাতা, লাল শাক, গাজর, লাউসহ সব সবজিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে নীলফামারী শহরের ওই পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের থেকে আড়তদাররা (পাইকাররা) সবজি কিনে তা দ্বিগুণ দামে ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
Bagun44
জেলা সদরের কুন্দুপুকর ইউনিয়নের পাটকামড়ি গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী (৪৬) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার দেড় বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে অনেক। পুঁজি খাটিয়ে, হাড় ভাঙা পরিশ্রমে আবাদ করে বাজারে এলেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে লসে বিক্রি করতে হয়। তাদের একচেটিয়া ব্যবসায় কৃষক নিরুপায়। তারা যে দামে কিনবে আমাদের সেই দামে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে আড়তদার ১৩-১৪ টাকা কেজি দরে বেগুন অর্থাৎ ৫২০-৫৬০ টাকা মণ দরে কিনছে। আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে। হাত বদলে ১৪ টাকার বেগুন বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকায়।’
একই গ্রামের ওবায়দুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘আজকে বাজারে ৫০ কেজি গোল বেগুন নিয়ে এসেছি। সেখানে প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
Bagun33
বেগুন চাষিদের অভিযোগ, কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। কৃষক প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করছেন ৫২০-৫৬০ টাকায়। ওই বেগুন খুচরায় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে।
সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৩০ টাকা ও গোল বেগুন ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষকরা প্রকার বা আকার ভেদে প্রতিকেজি বেগুনে লস করছেন ১৫-২০ টাকা। অপরদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা লাভ করছেন। জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, ‘উৎপাদন কম
হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। এ ছাড়াও কাঁচা সবজি বিক্রি না হলে পচে যায়। তাই কেজি প্রতি কিছু না কিছু লাভ করতেই হবে। তবে কিছু দিন পর আরও সরবরাহ বাড়বে। তখন বাজারে বেগুনসহ সবজির দাম কমে আসবে।’
Bagun22
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটে গোল বেগুন কিনতে এসে গৃহিণী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘এই মৌসুমে শীতের সবজিতে বাজার সয়লাব, অথচ অল্প আয়ের মানুষ সবজি কিনতে এসে দিশাহারা হয়ে পড়েন। গোল বেগুনের চপ তৈরি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ৫০ টাকা কেজিতে বেগুন খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই বেগুন না নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, ‘এবার সদরে এক হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এ বছর বেগুনের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে সরবরাহ প্রচুর। তবে কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে না।’ তিনি জানান, এবার হাইব্রিড জাতের বেগুন বেশি চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেগুন চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন