রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের হাসান নগর এলাকার ছাপাখানা ব্যবসায়ী নূর আলম হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা নুর আলমকে মাথায় হাতুড়ি আঘাতের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পরে বাথরুমে মরদেহ দুই খণ্ড করে ফেলে।
এরপর হত্যাকারীরা নুর আলমের খণ্ডিত মরদেহ পলিথিন ও কাপড় দ্বারা পেঁচিয়ে একটি বস্তায় ভরে ছাপাখানার ভেতরে টেবিলের নিচের মেঝে ভেঙে মাটি চাপা দেয়। এরপরে সে জায়গায় বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেয় যাতে কেউ বুঝতে না পারে। এ ঘটনায় মিরাজ মিয়া (২০) মো. শিপন ওরফে সম্রাট (২৫) ও মো. রিফাত (১৯) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বিস্তারিত জানতে পারে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি, কাচি ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়। নিহত নুর আলম চারসন্তানের জনক ছিলেন। পরিবার থাকতো দেশের বাড়িতে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম আরও বলেন, নূর আলম কামরাঙ্গীরচর থানার হাসান নগর ভান্ডারী মোড়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফেব্রিক্স প্রিন্টিং ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। গত ৬ ডিসেম্বর সকালে নূর আলম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবে মর্মে তার স্ত্রীকে ফোন করে। সে সময় তার স্ত্রী কয়েকজন লোকের সঙ্গে তার স্বামীর নুর আলমের বাগবিতণ্ডার কথা শুনতে পান। এরপর থেকে নুর আলমের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে নূর আলম নিখোঁজ থাকায় তার জামাতা মো. আতাউল্লাহ খান সজিব কামরাঙ্গীরচর থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন।
কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কামরাঙ্গীরচরে নিহত নুর আলমের ছাপাখানা থেকে কর্মচারী মিরাজকে গ্রেপ্তার করে থানার একটি দল। একই দিন কামরাঙ্গীরচরের ঝাউরাহাটি থেকে রিফাতকে ও কোতোয়ালি থানার সদরঘাট এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর ) ভোরের দিকে গ্রেপ্তার শিপন, মিরাজ, রিফাত ও পলাতক জিহাদসহ অজ্ঞাত আর ২-৩ জনের সহায়তায় নুর আলমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে এবং মরদেহ বাথরুমে নিয়ে দুই খণ্ড করে। হত্যাকারীরা নুর আলমকে মাথায় হাতুড়ি আঘাতের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পরে বাথরুমে মরদেহ দুই খণ্ড করে ফেলে। এরপর হত্যাকারীরা নুর আলমের খণ্ডিত মরদেহ পলিথিন ও কাপড় দ্বারা পেঁচিয়ে একটি বস্তায় ভরে ছাপাখানার ভেতরে টেবিলের নিচের মেঝে ভেঙে মাটি চাপা দেয়। এরপরে সে জায়গায় বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেয় যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
গ্রেপ্তারদের দেখানো মতে পুলিশ ছাপাখানার ভেতর থেকে মেঝের ঢালাই ভেঙে নূর আলমের দুই খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি হত্যার কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও চাকু এবং অন্যান্য আলামত পুলিশ উদ্ধার করে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের আসলে মূল ঘটনাটা কি টাকা-পয়সার লুট করার কারণে নাকি জুয়ার কারণে এছাড়া অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে নিহতের জামাতা আতাউল্লাহ খান সজিব জানান, তার শ্বশুর নূর আলমের স্ত্রীর নাম চম্পা বেগম এ দম্পতির চার সন্তান। এদের মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। পরিবারের সবাই ময়মনসিংহ গফরগাঁও এলাকায় গ্রামের বাড়িতে থাকে।
নুর আলম কামরাঙ্গীরচরে প্রিন্টিং প্রেস কারখানাতেই থাকতো। সেখানে একটি চকি ছিল কাজ শেষ করে ক্লান্ত হলে তিনি সেখানেই ঘুমাতো। ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাজার সদাই করে দিত। আর ঢাকায় এ ব্যবসা করতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার শ্বশুরের সঙ্গে আগে কারো সঙ্গে কোনো সম্পত্তির নিয়ে বিরোধ অথবা টাকা পয়সা নিয়ে বিরোধ এরকম কোনো ঘটনা নেই। আমার শ্বশুর ছিলেন নিরীহ মানুষ। তাকে আসলে কেন তারা হত্যা করেছে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি না।
তবে যতটুকু শুনেছি কর্মচারী মিরাজ বাইরের লোকজনদের নিয়ে কারখানায় ঢুকে জুয়া খেলছিল। এ সময় তাদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় নুর আলমের, সে সময় সে মিরাজকে বলতে থাকে তুই বাইরের লোক নিয়ে কারখানায় জুয়া খেলছিস এটা একটি কর্মস্থল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় কর্মচারী মিরাজসহ বেশ কয়জন তাকে হত্যা করে।
তবে ঘটনা কতটুকু সত্য বিস্তারিত পুলিশ বের করবে। এদিকে নুর আলমের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন