পণ্যের দাম বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও পুরনো কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও সরকারকে চাপে ফেলে তারা ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারে ভোজ্য তেলের বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে, যা সম্প্রতি আরও তীব্র হয়েছে। অনেক দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল মিললেও তা থেকে মূল্য ঘষে ফেলা হয়েছে। বেশি দামে বিক্রি নিয়ে প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতা বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই খবর পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার।
তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম হবে ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১৫৭ টাকা দরে। আগে বোতলজাত এই তেলের দাম ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল। মোস্তফা হায়দার বলেন, এক্স বন্ড, ইন বন্ড ভ্যালু এবং গত এক মাসে যে এলসি খোলা হয়েছে, তার ভ্যালু- এই তিনটা ভেল্যু যোগ ও গড় করে একটা দাম ঠিক করতে হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ খরচ, বোতলজাতকরণ খরচ যোগ করতে হয়। ২০১১ সাল থেকে এই পদ্ধতি চর্চা হয়ে আসছে। এখন থেকে প্রতি মাসে সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম ঠিক করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোজ্য তেলের দাম প্রতি টন ১২০০ ডলারের কাছাকাছি চলে গিয়েছে।
এদিকে বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে বাস্তবভিত্তিকভাবে বোতলজাত সয়াবিনের একটি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে অনুমাণের ওপর ভিত্তি করে মজুতদারি আজ থেকে বন্ধ হবে।
তেলের দাম বাড়ানোর জন্য কোম্পানিগুলো এতদিন সরবরাহে ঘাটতি তৈরি করেছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় ডিলাররা আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য সম্পর্কে সার্বিকভাবে অবহিত থাকেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই দামটা সমন্বয় হতে পারে। এ কারণে হয়তো অনেকে সরবরাহে বিলম্ব ঘটিয়েছেন, তাতে বোতলজাত সয়াবিনের কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, তেলের সরবরাহ-সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের জন্য অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় জিনিসটাকে বিন্যাস করে দেখেছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশের বাজারে সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তখন প্রতি লিটারে দাম বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়। এপ্রিল মাসের পরে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে সবার মধ্যে একধরনের শঙ্কা কাজ করছিল যে বাজারে তেলের দামে পরিবর্তন আসবে। দেশে সয়াবিন তেলের বিদ্যমান যে মজুত আছে, সেটাকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি মজুতে কোনো ঘাটতি নেই।
এদিকে ভোজ্য তেলের সংকটের কথা বলা হলেও দাম বাড়ার খবরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা মিলছে পণ্যটির। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে পূর্বে কম দামে কেনা তেল বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিবে ব্যবসায়ীরা। গতকাল সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছিলাম না। সোমবার থেকে এই তেলের আর কোনো সংকট নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন