গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষের শক্তিকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেলসহ অন্য নেতাদের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তির বিপক্ষে ছিল তারা এখনো বাংলাদেশ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের অনেক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করেছে। তাদের সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা আপস ছেড়ে সংগ্রামে নেমেছিলাম। ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আপস নয়, রাজপথেই থাকবো।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, আগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রোগ্রাম দিলে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। তাদেরকে বাসায় শান্তিতে থাকতে দেয়া হতো না। আমরা এখন দেখছি আওয়ামী লীগের দোসর ও জঙ্গিরা দলবলে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, জনসম্মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। প্রশাসন যদি মনে করে এই বিপ্লবী শক্তি স্তিমিত হয়ে গেছে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। হাসিনাও মনে করেছিল তার বিকল্প নেই, আমরাও আপনাদের বিকল্প খুঁজে নিতে দুইবার ভাববো না। এজন্য অতি দ্রুত তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন আমাদের দেশের এডমিনিস্ট্রেশনের পদে পদে স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা আখড়া বানিয়ে বসেছে। শুধুমাত্র হাসিনার পতন হয়েছে কিন্তু তার মুরিদের অবস্থান রয়েছে। এডমিনিস্ট্রেটিভ রিস্ট্রাকচারের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের চাকরিচ্যুত করে নতুন সার্কুলার দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেলসহ অন্য নেতাদের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা যদি মনে করেন নাহিদ, আসিফ থেকে শুরু করে হাসনাত ও সারজিস সবাইকে আপনারা মেরে ফেলবেন, লাখ লাখ নাহিদ আসিফ রাস্তায় দাঁড়াবে। আমাদের যতবার আক্রমণ করবেন তত দ্বিগুণ শক্তিতে আমরা রাস্তায় দাঁড়াবো।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থেকে যে ৬২৬ জনকে বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে, যারা ভারতে সেইফ হাউজে পাঠিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ভারতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয় দেয়ার প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ভারত এখন জঙ্গিবাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বাংলাদেশে যাদেরকে জঙ্গি হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারত তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। এই জঙ্গিরা যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ভারত যদি তাদেরকে অর্থায়ন ও ডিপ্লোমেটিকভাবে ফেসিলেটেড করে তাহলে ভারতের সঙ্গে আমাদের পরবর্তী সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভারতের উচিত গণঅভ্যুত্থানের পরে যে সরকার গঠিত হয়েছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করা।
তিনি আরও বলেন, ভারত সবসময় একটা মাইনোরিটি কার্ড প্লে করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে সবসময় সাম্প্রদায়িক এক ধরনের উগ্রতা-বিষবাষ্প অব্যাহত রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি, যারা বাংলাদেশের বিপক্ষের শক্তি তারাই মাইনোরিটি। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সবসময় অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের পথে হয় মাতৃভূমি রয়েছে না হয় আমরা মৃত্যুকে বরণ করে নেবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন