দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার খবর ‘পলাতক কর্তাদের কাছে তথ্য ফাঁস করছেন আস্থাভাজনরা!’। খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের অন্তত দুই শতাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আত্মগোপনে থাকলেও তাদের আস্থাভাজনরা (সিন্ডিকেট) আছেন বহাল তবিয়তে। তারা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। সেখান থেকে কৌশলে বাহিনীর গোপন তথ্য পলাতক কর্তাদের কাছে পাচারও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের মধ্যে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করবে না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত শেষে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। নিরপরাধ পুলিশের কোনো সদস্যকে হয়রানি করা হবে না।
এদিকে, আত্মগোপনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া তাদের বিষয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তাদের প্রোফাইল সংগ্রহ করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল বিভাগ। নির্দেশনা আসার পরপরই ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানো হবে তালিকাটি।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, আত্মগোপনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার পরও তাদের আস্থাভাজনরা আছেন বহাল তবিয়তে। আবার কিছু সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করায় কিছুটা সমালোচনা হলেও যারা জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আসামি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের আদৌ আইনের আওতায় আনা যাবে কি না, তাও নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট থাকবে না। কেউ সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করলে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণঅভ্যুত্থানে অতি বল প্রয়োগ করা পলাতক পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছেন, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। যারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা হবে। পুলিশের কিছু সদস্য বাড়াবাড়ি করেছেন তা সত্য। পুলিশকে আরও জনবান্ধব করার চেষ্টা চলছে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তকে জানায়, কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমনপীড়ন চালায়। গুলিতে শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোকজন, পুলিশ, আনসারসহ দেড় হাজারের মতো প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এই প্রথম। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে এখনো। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে তিনি গোপনে পালিয়ে যান ভারতে। আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের বড় বড় নেতা চলে যান আত্মগোপনে। তাদের মতোই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত থাকেন আত্মগোপনে। পুলিশের খাতায় ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে আছেন অনুপস্থিত। তাছাড়া প্রায় ২৫ জনের মতো হয়েছেন গ্রেপ্তার। তাদের রিমান্ডে নিয়ে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ বেপরোয়া বলপ্রয়োগ করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এবং এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের আস্থাভাজনরা এখনো বিভিন্ন দপ্তরে বহাল তবিয়তে। তার মধ্যে শেখ সুরাইয়া ঊর্মি, এসি (প্রকিউরমেন্ট) লজিস্টিকস বিভাগ নিয়োগ দেন হাবিবুর রহমান। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ও টেন্ডারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ঊর্মির সঙ্গে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার অশ্লীল ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছিল। পুলিশ পরিদর্শক নাজমা আক্তার ওসি রেশন স্টোর হিসেবে প্রায় চার বছরের অধিক সময় কর্মরত আছেন। হাবিবুর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবেই পরিচিত আসমা আক্তার সোনিয়া এসি সিআরও হিসেবে কর্মরত আছেন। সোনিয়া নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে কর্মরত এসআই খবিরুল ও এসআই মাহফুজা। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ইমরান (সাবেক ফরেনসিক ও সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিম) বর্তমানে বিশেষ পুলিশ সুপার গাজীপুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন ও টিআই মানব শাহজাদা, ওসি-রেশন ইন্সপেক্টর মো. বদিউজ্জামান, ওসি-এমটি এসআই ফারুক, আরওআই আসমাউল হোসনা, আরও-১ এসআই জিয়াউর রহমান, আরও (ফোর্স) এসআই ফুয়াদ বিন রশিদ কর্মস্থলে থেকে এখনো সক্রিয় আছে নানা অপরাধে। তারা সাবেক সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলীর আস্থাভাজন। তাদের বিরুদ্ধে রেশনসহ নানা কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাদের মধ্যে কেউ বদলিবাণিজ্যতেও লিপ্ত আছে। গত ৬ আগস্ট রাত ৮টায় সিআইডি অফিসের লাইট বন্ধ করে আন্ডারগ্রাউন্ডের লিফট ব্যবহার করে গ্যারেজে দুটি মাইক্রোবাসে করে ৩২ বস্তায় টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এসবির মেস ম্যানেজার এসআই মিলন মিয়া ও আরও-১ মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধেও আছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তারা দীর্ঘদিন ধরে একই স্থলে কর্মরত আছেন। তার মধ্যে মিলন মিয়া সারা দেশের রেশন বিক্রি করার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।
আজকের পত্রিকা
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব ভোট চান জনপ্রতিনিধিরা’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। প্রয়োজনে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। তাঁরা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে করার দাবিও জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সিটি করপোরেশন, ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের ২০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের অনেকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবিও জানান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। বৈঠকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে: নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করা, দিনের ভোট যেন রাতে না হয়, আগের সরকারের আমলের কেউ যেন পুনর্বহাল না হয়, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ভোট, মেয়রের ক্ষমতা কমানোর জন্য প্যানেল থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে স্বাক্ষরের ক্ষমতা দেওয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষমতায়িত করা, একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়া রোধে ভোটের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়া, স্থানীয় সরকারের জন্য সমন্বিত আইন করা, কোনো ভোটার তাঁর নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থান করলে বা প্রবাসে থাকলে ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ রাখা। এ ছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার বহাল রাখে, সে প্রস্তাবও দেন তাঁরা।
বৈঠক শেষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা সবাই নির্দলীয় নির্বাচনের
কথা বলেছেন। যে পদ্ধতিতে আছে, সেই পদ্ধতিতেই যেন নির্বাচন হয়, সংসদীয় পদ্ধতিতে যেন না হয়। তাঁরা নারী প্রতিনিধিত্ব অর্থবহ করতে ঘূর্ণমান পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অর্থবহ করতে সব স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচনের কথা বলেছেন। অনেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই সংসদ নির্বাচনের আগে বা পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা সব সময় সব নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চেয়েছেন। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ বাড়াতে বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে তাঁরা জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের দেখতে চেয়েছেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পদচ্যুত করায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা মনঃক্ষুণ্ন, প্রায় সবাই অসন্তুষ্ট। কিন্তু তাঁরা সবাই সত্যিকারের ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চান; যা হবে সংসদ সদস্য এবং কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করে তাঁরা নারীদের ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে ভালো ব্যক্তিরা এলে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হবে। তাঁরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থানীয় সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধি গতকালই প্রথম জাতীয় সংসদ ভবনে আসতে পারায় সম্মানিত বোধ করেছেন বলে জানান সংস্কার কমিশনের প্রধান। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাঁরা কাজ শেষ করতে চান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন (বুলবুল) বলেন, তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চেয়েছেন ও কমিশনকে কঠোর হতে বলেছেন। তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিতে বলেছেন। ইসির কর্মকর্তাদের যেন রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়, ডিসি বা ইউএনওকে নয়। নির্বাচনের সময় বিচার বিভাগ ছাড়া সবকিছু ইসির নিয়ন্ত্রণে চান তাঁরা।
প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক:সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই আজ দুই পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠক’। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই আজ সোমবার সকালে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক।
গত সপ্তাহে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে নজিরবিহীন হামলা করে স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠন। এর প্রতিবাদে পরদিন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তে দুই পররাষ্ট্রসচিবের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরি হয়েছিল।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটিই হবে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম বৈঠক।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে এটি হবে বিক্রম মিশ্রির প্রথম বাংলাদেশ সফর। খসড়া সূচি অনুযায়ী, তিনি পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে একান্তে বৈঠক করবেন। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে যোগ দেবেন মধ্যাহ্নভোজে। এরপর তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। আজ রাতেই বিক্রম মিশ্রির দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকটি নিয়মিত আলোচনার প্রক্রিয়া হলেও বাংলাদেশে ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, শেখ হাসিনার পতনকে সারা বিশ্ব অনিবার্য পরিণতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ভারত ওই পরিবর্তনকে এখনো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি; বরং সংখ্যালঘু ইস্যুটিকে সামনেই রেখে চলেছে।
গতকাল ঢাকায় এক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে যে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে সম্পর্কের নিশ্চয়ই গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এটা মেনে নিয়ে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমি আশা করব, তাঁরা ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।’
প্রথম পাতার আরেক খবরে বলা হয়, ইউসিবি থেকে ২ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছেন সাইফুজ্জামান–ঘনিষ্ঠরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের চার প্রতিষ্ঠান। এই ঋণ দিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ না করলেও পরিচালনা পর্ষদে তা অনুমোদিত হয়েছে। এর বাইরে যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার কিনেও লোকসানে পড়ে ব্যাংকটি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই সময়ে এসব অনিয়ম হয়।
ইউসিবিতে যখন এসব অনিয়ম ঘটে, তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ওরফে জাভেদের স্ত্রী রুকমিলা জামান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী। মোহাম্মদ আদনান ইমাম যুক্তরাজ্যের নাগরিক, সে দেশে আবাসন খাতে তাঁর ব্যবসা রয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে বলে বিভিন্ন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এসব বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। আবাসন খাতের সূত্রে এই দুজন বেশ ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালে ইউসিবি দখলে নেয় সাইফুজ্জামানের পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটির ঋণের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একাধিক নিরীক্ষা হয়। এতে ঋণ দেওয়ায় অনিয়মসংক্রান্ত এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছেন ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহির। তিনি ব্যাংকের আমানতকারী ও শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার বিক্রেতা আমির রসুল ও জাহারা রসুল, আদনান ইমাম এবং ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর কবিরের (অপু) বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
ইউসিবি সূত্রে জানা গেছে, জেনেক্স ইনফোসিসকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তা খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
এ নিয়ে আদনান ইমামের বক্তব্য জানতে একাধিকবার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
যুগান্তর
দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘সম্পদ বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় হবে’। খবরে বলা হয়, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির (সাবেক নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) সাবেক পরিচালক, যারা ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাদের শেয়ার বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করা হবে। এতে পুরো টাকা আদায় না হলে দেশে তাদের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলোয় হাত দেওয়া হবে। এতেও টাকা আদায় না হলে সংশ্লিষ্ট সাবেক পরিচালককে ঋণ শোধের নির্দেশ দেওয়া হবে। শোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা অনুযায়ী জেল-জরিমানার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া যারা ঋণের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিদেশে থাকা সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। ওইসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর যারা সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ শোধ না করবেন, তাদের ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঘোষণা করে ব্যবসার সুযোগ সংকুচিত করে ফেলা হবে।
খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এবং আদায় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোকেও সম্প্রতি প্রচলিত বিধিবিধানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে খেলাপিকে চাপ দিয়ে ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, যেসব পরিচালক জালিয়াতি করে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে তাদের শেয়ার বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব। তাদের নামে দেশে যেসব সম্পদ বা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে, সেগুলোও বিক্রি করে টাকা আদায় করা সম্ভব। এছাড়া দেশে তাদের নামে অন্য যেসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে, সেগুলোও বিক্রি করার আইনি কাঠামো করতে হবে।
তিনি বলেন, পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও আইনের আওতায় এনে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি করতে হবে। খেলাপি ও জালিয়াতদের বিরুদ্ধে এসব কঠোর পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিচালক এমনসব অপকর্ম করার সাহস পাবেন না।
কালের কণ্ঠ
‘ভারত ইস্যুতে কঠোর বিএনপি’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও ভারত তাদের অবস্থান না বদলানোয় বিস্মিত হয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দেশটির বক্তব্য-বিবৃতি দলটির ভেতরে ক্ষোভ তৈরি করেছে। ফলে বিএনপিতে ভারতবিরোধী অবস্থান জোরালো হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এত দিন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ও ভারতপন্থী দুটি ধারা চলে আসছিল।
বিএনপি আসলে বাংলাদেশের পক্ষে। তাই বিএনপি একদিকে যেমন ভারতের সঙ্গে কূটনীতিক পর্যায়ে বন্ধুত্ব চায়, অন্যদিকে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকবে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ভারত। এমনকি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা-নির্যাতনের তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও বিশ্বে তা ভিন্নভাবে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
দেশটির সরকারের বক্তব্য-বিবৃতিও উসকানিমূলক বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতকাল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে পদযাত্রা করে স্মারকলিপি দিয়েছে দলটির তিন সহযোগী সংগঠন। আগামী ১১ ডিসেম্বর ভারতের আগরতলা অভিমুখে লং মার্চ করবে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
গত সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে বিএনপির ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়তে থাকে। কিন্তু এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিতে যায়নি দলটি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের এক ধরনের সমঝোতা হতে পারে—এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও বাস্তবিক অর্থে সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের তিন সংগঠন ভারতবিরোধী কর্মসূচি দিয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি সামনে আরো আসবে।
সমকাল
দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘কর্মকর্তাদের কারসাজিতে পেঁয়াজ চাষে সর্বনাশ’। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সরবরাহ করা ৩৪ টন পেঁয়াজের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৫৯ জেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এক কেজি করে মাগনা পেঁয়াজের বীজ পেয়ে ৩৪ হাজার কৃষকের মলিন মুখে ফুটেছিল চওড়া হাসি। প্রণোদনার এই বীজ যে এতটা যন্ত্রণার ঝাঁজ হয়ে ফিরবে, আন্দাজও করতে পারেননি চাষিরা। ঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে বীজ বপন করার পরও ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ চারা মাটি ফুঁড়ে বের হয়নি। বীজ থেকে পেঁয়াজ না আসায় এ বছর হাজার হাজার চাষির স্বপ্ন মাঠে মারা। এ পরিস্থিতির জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরই দুষছে কৃষককুল।
কৃষকের অভিযোগ, সরকার যে পেঁয়াজ বীজ দিয়েছে, তা ভেজাল। বিএডিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কারসাজিতেই এমন সর্বনাশ হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নিম্নমানের ভেজাল বীজ কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছে। বীজ আমদানির নামে কোটি কোটি টাকা লুটে নিলেও এখনও তারা অধরা। অবশ্য অভিযোগ আসার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে ফের বিনামূল্যে উন্নত মানের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহও করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসি গঠন করেছে আলাদা তদন্ত কমিটি। প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজে ভেজাল ছিল, এরই মধ্যে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তারা প্রণোদনার নামে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে কৃষক এভাবেই ঠকবেন। এতে নির্দিষ্ট সময়ে হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে না। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মাঠে মাঠে কৃষকের রোদন
রাজবাড়ীর কালুখালীর চরশ্রীপুর গ্রামের চাষি বাচ্চু খান। বলছিলেন, ‘কী দানা দিল কৃষি অফিসাররা? আমার তো বিশাল ক্ষতি হয়া গেল! সরকার কৃষকের দানা দেছে উন্নতির জন্নি, না ক্ষতি করার জন্নি? এ বছর চাষ মাইর গেল। এই জমিতি এহন কিছু করা যাবি নানে।’ একই জেলার বালিয়াকান্দির পূর্ব মৌকুড়ি গ্রামের কৃষক নূর হোসেন মিঞার চোখেও এখন রোদন। বারুদ-কণ্ঠে নূর হোসেন বলেন, ‘পাশের জমিতে চাষিরা বাজার থেকে বীজ লাগিয়েছে। সেই জমিতে তরতর করে পেঁয়াজের গাছ বেড়ে উঠছে। ভেবেছিলাম, সরকারি বীজে ভালো ফলন পাব। ফলন তো দূরে, বীজই গজায়নি। সরকার আমার যে ক্ষতি করেছে, বিচার কোথায় পাব?’
ইত্তেফাক
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খরব ‘পরিবর্তন মেনেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে, বার্তা দেবে ঢাকা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েনের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবরা। বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লিকে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতা মেনে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেওয়া হবে। অন্যদিকে দিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্ধারিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে যোগ দিতে আজই ঢাকায় আসছেন বিক্রম মিশ্রি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারতের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার এটিই প্রথম ঢাকা সফর।
এফওসিতে দুই দেশের মধ্যে প্রধান প্রধান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এ বৈঠকটি এমন একসময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীয় একজন নেতার গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত, সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছে, আবার কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।
মূলত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘু ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর ঘটনাপ্রবাহ দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, তাতে এই বৈঠকে কী আলোচনা হবে এবং কোন দিকে পরিস্থিতি মোড় নেবে তা নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহ রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক থেকে বড় কিছু অর্জনের সুযোগ না থাকলেও, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই দেশ বৈঠক বা আলোচনায় বসেছে—এটাই হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
ডেইলি স্টার
দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতার খবর ‘Indian foreign secy’s visit: 2 countries to try to mend relations’ অর্থাৎ ‘ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সফর: সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় দুই দেশ’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) মাধ্যমে কমানোর করার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ ও ভারত।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। বাণিজ্য, পানি ও স্বরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এফওসিতে উপস্থিত থাকবেন।
মিশ্রি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
গত ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই ভারতের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ সফর। এর আগে গত ১৬ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোনে কথা বলেন।
নয়া দিগন্ত
‘হাসিনাকে দেশে এনে আইনের সম্মুখীন করবে সরকার’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন (বন্দী বিনিময়) চুক্তি রয়েছে। এই অনুযায়ী কাউকে ফেরাতে হলে কিছু আইনি (লিগ্যাল) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এই আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এটি শেষ হলেই শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাথে কথা বলবে সরকার। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের সম্মুখিন করতে চাই।
গতকাল রোববার সন্ধায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন আরেক উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে এটি তার নিজস্ব বক্তব্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফেসবুকে যেসব অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো সরাতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এ ব্যাপারে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার প্রতিনিধি গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছেন। আজ সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার সাথে তার সাক্ষাৎ হতে পারে। তবে বাংলাদেশ আশা করছে, ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো ভালো হবে। এ সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে সয়াবিন তেলের কোনো সঙ্কট নেই।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা চাই ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো হোক; তবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের আহ্বান- আপনারা বাংলাদেশে এসে প্রতিবেদন করেন। অনেকে মিথ্যাই প্রচার করতে চায়, এতে তাদের লাভ। শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে মেটার পর্যবেক্ষক আছে। তারা দেখছে কোথা থেকে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে যেকোনো অপতথ্য আমরা মেটার নজরে আনব। এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে সরকার অবস্থান একেবারে স্পষ্ট ও পরিষ্কার। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের সম্মুখিন করতে চাই। কারণ, তার আমলে গণহত্যা হয়েছে।
গত জুলাই আগস্টে দেড় হাজারের বেশি মানুষ হত্যার মূল নির্দেশদাতা তিনি। এর আগেও অনেক গুম হয়েছে, তখন তিনি সরকারের প্রধান ছিলেন। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন দেশে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এসব অর্থ বাংলাদেশের করদাতাদের। এটি চুরি করে বাইরে পাঠানো হয়েছে। এসব বিষয় জবাবদিহিতার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা এটি করব। তবে এটি করার জন্য ভারতের সাথে আমাদের প্রত্যাবর্তন চুক্তি আছে। সেই চুক্তির আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে কাউকে প্রত্যাবর্তন চাওয়া যায়। আমরা সেই প্রক্রিয়া শেষ করছি। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে শেখ হাসিনা ফেরত দেয়ার জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে বলব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো ভালো (বেটার) হবে। তাদের সাথে আমাদের ভাষা সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। আমরা চাইব এই সম্পর্ক আরো ভালো হোক। তবে এই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ। এখানেই আমাদের অগ্রাধিকার। এতে দুই দেশের মানুষই এর সুবিধা পাবে।
বণিক বার্তা
‘বছরে অনুমোদন ২০-২২ হাজার, প্রকৃত সংখ্যা কেউ জানে না’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানে বিদেশী কর্মীদের নিয়োগ পেতে সংস্থাটির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। বিডায় সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কতজন বিদেশী ওয়ার্ক পারমিট চেয়ে আবেদন করেছে, সে তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এ সময় দেশে কাজের অনুমোদন পাওয়া বিদেশীর সংখ্যা ২০-২২ হাজার।
এখন পর্যন্ত কাজের অনুমতি পাওয়া বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে বৃহদংশই ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও চীনের নাগরিক। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত অন্যান্য বিদেশীর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এসেছেন থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে রুশ নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে কতজন কোন খাতে বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করছেন, সে বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা বা সংগঠনের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের দ্রুত বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে সরকার। গতকালই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। এতে বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজে নিয়োজিত বিদেশীদের দ্রুত বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্রে সরকার অভিযোগ পেয়েছে যে অনেক ভিনদেশী নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। যেসব বিদেশী নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন