রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় এনেক্সকো টাওয়ারের বেইসমেন্টসহ ছয়তলা বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু মালিকপক্ষ অনুমোদনের বাইরে ভবনটি ৯ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করে। এর জন্য রাজউক থেকে নেওয়া হয়নি অনুমোদন। আবার ভবনের নকশায় সাতটি লিফট থাকার কথা থাকলেও রয়েছে চারটি।
সিঁড়িতে চলাচলের স্থানে কলাসিবল গেট ও কাপড়ের দোকান বসানোয় চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। নকশায় বেইসমেন্ট পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলা হলেও সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক কাপড়ের দোকান। পাশাপাশি ২০২৩ সালে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এনেক্সকো টাওয়ারের বিভিন্ন তলায়ও ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। এত সব অনিয়মের কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা করছে রাজউক।
ফলে ভবনটির অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি বছর ৫ মার্চ এনেক্সকো টাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রাজউকের জোন-৫/৩-এর অথরাইজ কর্মকর্তা। ওই নোটিশে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ছয়তলা থেকে ৯ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের কারণ জানতে চাওয়া হয়। ১০ মার্চ চিঠির জবাব দেয় এনেক্সকোর মালিকপক্ষ।
কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৪ মার্চ রাজউক আবারও নোটিশ দিয়ে মালিকপক্ষকে নিজ উদ্যোগে ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, নির্মীয়মাণ ভবনে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলে এনেক্সকো কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে। নোটিশ জারির সাত দিনের মধ্যে ভবনটির বর্ধিত অংশ ভেঙে অপসারণ করতে বলা হয়। তবে ওই নির্দেশনার বিরুদ্ধে গত ১৯ মার্চ উচ্চ আদালতে রিট করে এনেক্সকো টাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
এদিকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এনেক্সকো টাওয়ারসংলগ্ন বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন এনেক্সকো টাওয়ারের বিভিন্ন তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
ওই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল ফায়ার সার্ভিসের। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর মধ্যে ভবনটি ছয়তলার পরিবর্তে ৯ তলা করায় ঝুঁকি আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ না করা অপরাধ। এনেক্সকো ভবন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রাজউকের বিধি অনুযায়ী নোটিশ করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, ফলে আদালতের নির্দেশনা ও রাজউকের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটির নকশা অনুমোদনের পর বেইসমেন্টে পার্কিংয়ের জায়গায় নকশা অমান্য করে শতাধিক শাড়ির দোকান নির্মাণ করেছে এনেক্সকো টাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। আবার রাজউক অনুমোদিত নকশায় লিফটের সংখ্যা সাতটি রাখা হলেও মার্কেটটিতে লিফট রয়েছে মাত্র চারটি।
বঙ্গবাজার মার্কেটের ঠিক উত্তর পাশে ৯ তলা এনেক্সকো টাওয়ার। টাওয়ারটির বেইসমেন্টসহ আটতলা পর্যন্ত শাড়ি-কাপড়ের দোকান ও গোডাউন। ৯ তলার একাংশে নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। আরেকাংশে নির্মাণ করা হয়েছে গোডাউন ও দোকান।
বেইসমেন্টে শতাধিক শাড়ির দোকান গড়ে তোলায় পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে ক্রেতাসাধারণ ভবনের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিং করছেন। একইভাবে ভবনটিতে ওঠার সিঁড়িতেও রাখা হয়েছে দোকানের মালপত্র। সব মিলিয়ে টাওয়ারটিতে দোকান ও গোডাউনের সংখ্যা অন্তত পাঁচ শ।
এনেক্সকো টাওয়ারের ব্যবসায়ী সাইফুল আলম বলেন, মার্কেটের নেতারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এনেক্সকো টাওয়ারে কর্তৃত্ব করছেন। নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিত তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া।
এনেক্সকো টাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাত্তার ঢালী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনেক্সকো টাওয়ারের বিষয়টি দেখভাল করেন মীর আল মামুন। উনি দেশের বাইরে আছেন। ছয়তলার অনুমোদন নেওয়া হলেও ১২ তলা ভবনের ফাউন্ডেশন করা আছে। বর্ধিত তলার অনুমোদনের জন্য আমরা নতুন করে নকশার জন্য আবেদন করেছি।
সেটি এখনো রাজউক পাস করেনি।’ জানতে চাইলে রাজউকের জোন-৫-এর পরিচালক মো. হামিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনেক্সকো টাওয়ার কর্তৃপক্ষ নকশা বহির্ভূতভাবে তিনটি ফ্লোর তৈরি করেছে। বিষয়টি জানার পরই তাদের কাছে ভবনের মূল নকশা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। উল্টো উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। ফলে আইনগত দিকটি দেখার জন্য ওই ভবনের ফাইল রাজউকের আইন শাখায় পাঠানো হয়েছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন