ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া, কোন আইন নিয়ম কানুন কোন কিছুর পরোয়া করছে না। বিগত ১৬ বছর দেশের ক্ষমতার কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আর এ কাজে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কাঠামো নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সবকিছুকে তারা ব্যবহার করেছে। যার কারণে তারা যা চেয়েছে তাই হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ীরা একেক বার একেকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট সম্মেলন কক্ষে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলনের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-০১) আলীম আখতার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ডঃ মোঃ জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) মোঃ শরীফ উদ্দীন ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামিল চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, জনতার আন্দোলন বিফলে যায় না, যারা হতাশায় ভুগতেন তাদের অবশ্যই নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও চবি¦শের জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। ক্যাবের আন্দোলনের কারণে আজকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তাই কিছুই হবে না বা অসাধু ব্যবসায়ীদের শংখলায় আনা যাবে না এ তত্ত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যাপক গণজাগরণে অসাধু ব্যবসায়ীদের সব অপকর্ম একদিন বন্ধ হবে। তবে এজন্য তৃণমূলে জনগণের কন্ঠশ^র শক্তিশালী করতে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নাই। যে কোন জনভোগান্তি ও অধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটলেই তাদের পাশে দাড়ানো ও জোরালো প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণদের মাঝে স্বপ্ন দেখাতে হবে। দেশে ভোক্তা অধিকার লংগনের ঘটনা প্রতিরোধে তরুণ সমাজকে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী করতে না পারলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বৈষম্য কমানো যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সামাজিক প্রতিরোধে ক্যাবকে নেতৃত্ব প্রদানের আহবান জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ডঃ মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা অর্থনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। সমাজের যে কোন পরিবর্তনে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নাই। যারা অসাধু ব্যবসায়ী নানা অপকর্ম করছে, তারা আমাদের সমাজের অংশ। কারো ভাই, কারো আত্মীয়স্বজন। তাই অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
আলোচনায় আরও অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাবিদ ডঃ প্রফেসর ইদ্রিস আলী, ক্যাব বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহীন, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদুল আলম, কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন সিদ্দিকী, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রানা মহসিন, ন্যাপ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ¦ আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য সচিব শাহাদত হোসেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজউল্যাহ, জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে রমজান উপলক্ষে সরকার অনেকগুলো পণ্যের আমদানি শুল্ক কমালেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই। ১৮ কোটি সাধারণ মানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে জনগণের ভোগান্তি, হয়রানি ও মনোবেদনার কথা সরকারের নজরে আনতে ক্যাবকে আরও শক্তিশালি এবং সোচ্চার হতে হবে। দেশে নৈরাষ্যবাদীদের মতো দেশে কিছু হবে না, এই তত্ত্বের স্থলে জুলাই অভ্যত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ যেমন এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব, সেরকম ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য থামাতে একইভাবে সামাজিক আন্দোলন এক সময় সফল আন্দোলনে পরিণত হবে।
সম্মেলনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সম্মেলনে ক্যাব নেতৃবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানান বক্তারা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন বক্তারা। সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১৫০ জন ক্যাব নেতা ও প্রতিনিধি অংশ নেন।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন