ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গোয়েন্দাদের জালে আটকা পড়েন হেভিওয়েট কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আমলা, সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হন পতিত সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ী। যারা গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে বিলাসী জীবনযাপন করতেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর তাদের সেই বিলাসী জীবন এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। গ্রেফতার হয়ে ক্ষমতাবানরা আজ কারাগারের চার দেয়ালে আবদ্ধ। দু’জন ভিআইপি বন্দী বার্ধক্যজনিত কারণে হাসপাতালে ঠাঁই পেয়েছেন। আর যাদের হাসপাতালে ঠাঁই হয়নি তারাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কারাগারেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদের মধ্যে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৯ কারাগারে ৭৫ জন ভিআইপি বন্দীর ঠাঁই হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সরকারি আমলা, প্রভাবশালী রাজনীতিক, পুলিশসহ তৎকালীন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপে জানা গেছে, যারা এখন জেলখানায়, তারা এত দিন বিলাসী জীবনযাপন করেছেন। এখন তাদের সেই বিলাসী জীবনে ভাটা পড়েছে। কারাগারে একটি রুমের ভেতর চলছে তাদের জীবনযাপন। ডিভিশন পাওয়ায় কারা অভ্যন্তরে পাচ্ছেন বিশেষ খাবার, ব্যক্তিগত কাজের লোক ও পত্রিকা। পত্রিকা পড়ে তাদের দিন পার করতে হচ্ছে। অনেকেই নিয়মিত নামাজও আদায় করছেন।
একসময় যাদের কথায় সরকার চলত, তাদের জেলজীবন কেমন কাটছে, তা নিয়ে কৌতূহলী মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগীয় ৯টি কারাগারে যেসব ভিআইপি বন্দী আছেন তাদের শ্রেণীপ্রাপ্ত একটি তালিকা এসেছে নয়া দিগন্তের হাতে। তার মধ্যে ঢাকা কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার ৪০ জন, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ আছেন আটজন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ আছেন আটজন, মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে আছেন দু’জন, গাজীপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন ১১ জন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন একজন, কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন একজন, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আছেন দু’জন ও মাদারীপুর জেলা কারাগারে আছেন দু’জন।
কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ৪০ (চল্লিশ) জন শ্রেণীপ্রাপ্ত বন্দীর তালিকা : সাবেক আইনমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল হক (৬৮), সাবেক বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন (৮১), সাবেক বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী (৬৪), সাবেক রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন (৭০), সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নরসিংদী-৪ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (৭৩), সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান খান (৭৮), সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি (৫৯) রয়েছেন গাজীপুর কাশিমপুর মহিলা কারাগারে, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু (৭৯), সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় (৫৩), সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও রংপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুনশি (৭৫), সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু (৫৪), কিশোরগঞ্জ-২ সাবেক সংসদ সদস অ্যাডভোকেট মো: সোহরাব উদ্দিন, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান, নরসিংদী-২ সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান (৬৪), জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু (৭৯), ঢাকা সিটি করপোরেশান উত্তর সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সমশের মবিন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ বি এম (অব:) তাজুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম আছেন গাজীপুর কাশিমপুর মহিলা কারাগারে, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় (৫৩)।
এ ছাড়াও পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর (৭৪)।
বিভিন্ন সরকারি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় আছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব মো: শাহ কামাল (৬৪), এনটিএমসির সাবেক চেয়ারম্যান ও মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসান (৫৪), সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক ডিএমপি পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক সচিব যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মেজবাহ উদ্দীন, সাবেক এডিসি (ডিবি ডিএমপি) শাহেন শাহ, আলোচিত গুলশান থানার ওসি সর্বশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম (৫৮), রাঙ্গামাটি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক পুলিশ সুপার মো: জুয়েল রানা (৪৩), রিয়ার অ্যাডমিরাল মো: সোহাইল (৫৭), ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়াল (৫৪), সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (৬০), সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (৭৯), পিএসসির সহকারী পরিচালক পিএসসি এস এম আলমগীর কবির (৪৯), মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি এস এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাবেক পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হায়দার, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আমজাদ হোসেন খান, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো: মহিবুল হক, বিআইডব্লিউটিএ সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি সাবেক ডা: মো: শামসুদ্দোহা খন্দকার, ব্যাসিক ব্যাংক সাবেক জি এম মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সেনালী ব্যাংক সাবেক ডিএমডি মাইনুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং উপদেষ্টা ড. কামাল আবুল নাসের চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, আইসিটি বিভাগের বিসিসি (ডেটা সেন্টার) সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান, নৌবাহিনীর সাবেক কমোডর ও এনএসআইর বর্ডার উইংয়ের সাবেক পরিচালক কমোডর (অব:) মনিরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহম্মেদ। গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মো: ইফতেখার মাহমুদ (৩৪), সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মো: আরাফাত হোসেন, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবদুল্লাহিল কাফি, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মশিউর রহমান ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন