সীমান্তে বাংলাদেশিদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাগুলো ভারতের কথিত অংশীদারত্বের বিপরীতে শত্রুতার নির্মম প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে সীমান্তে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের চুক্তি যথাযথভাবে মেনে চলা ও ‘সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সহনশীল’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পঞ্চগড় সীমান্তে আনোয়ার হোসেন নামে একজন বাংলাদেশিকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা উল্লেখ করেছেন।
পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, আমরা পঞ্চগড় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আরও এক বাংলাদেশি নাগরিক মো. আনোয়ার হোসেনের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বারবার নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে, যা বেঁচে থাকার অধিকার ও সীমান্ত সুরক্ষায় ন্যায্যতার নীতিমালা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম লেখেন, ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিএসএফ ৫২২ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এরমধ্যে ৩২৪ জন গুলিতে নিহত এবং বাকিরা নির্যাতনের মাধ্যমে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১০ সালের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিএসএফেরর গুলিতে ৩৪৭ বাংলাদেশি এবং ১৬৪ ভারতীয় নিহত হয়েছেন।
‘দুঃখজনকভাবে এ হত্যাকাণ্ড এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে ৩৪ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২১ সালে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এ মৃত্যুগুলোর স্বপক্ষে প্রায়শই চোরাচালান প্রতিরোধ বা আত্মরক্ষার মতো অসাড় যুক্তি উপস্থাপন করা হয়, যা ২০১৮ সালের চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। চুক্তিতে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল।’
সীমান্তের এমন ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড বন্ধুত্ব নয়, শত্রুতার প্রকাশ ঘটায় মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম লেখেন, এমন নির্মম বাস্তবতা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশেষ করে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সীমান্তে ৩০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যা কথিত অংশীদারত্বের বিপরীতে শত্রুতার এক নির্মম প্রমাণ।
সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারত সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা লেখেন, ভারত সরকারকে অবশ্যই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলেন। জীবনের অধিকার রক্ষা, ন্যায্যতা এবং মানবিক আচরণের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করাই সব ধরনের সীমান্ত কার্যক্রমের ভিত্তি হওয়া উচিত। প্রকৃত বন্ধুত্ব কেবল পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও সম্প্রীতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মোমিনপাড়া ও ভারতের শিংপাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর ৮ ও ৯ নম্বর সাব পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় গুলিতে নিহত হন আনোয়ার হোসেন। পরে বিএসএফ তার মরদেহ নিয়ে যায়। নিহত আনোয়ার তেতুঁলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের দেবনগর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন