দেশের বিশিষ্ট কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহুাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের সংলাপে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভারতে অপপ্রচার, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার, মাজার ভাঙা, লালনমেলা হতে না দেওয়াসহ অনেক বিষয়ে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি।
ডয়চে ভেলে : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের বৈঠকে আপনি তো ছিলেন, সেখানে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব, উপস্থিতি ছিল?
ফরহাদ মজহার : না না, অল্প সময়ের মধ্যে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্বশীল উপস্থিতি তো সম্ভব নয়।
অধিকাংশ ছিলেন। আমি সেখানে আমার বক্তব্যে বলেছি যে যারা মূলত আন্দোলন করেছে সম্মিলিত সনাতনি জোট (সনাতন জাগরণ মঞ্চ) তারা ছিল না। হিন্দু মহাজোট, তারা ছিল না। তারা তো মূলত আন্দোলনটা করেছে।
সেটা একটা দিক। এটা ছিল ধর্মীয় প্রতিনিধিদের একটা সম্মেলন। সে কারণে যারা পলিটিক্যাল গ্রুপ তাদের হয়তো ডাকা হয়নি। আমি গিয়েছি, যেহেতু আমি একটা বিশেষ ঘরানার।
ডয়চে ভেলে : আপনি তো লালন, তারপর মাজারে হামলার ব্যাপারে কথা বলেছেন...
ফরহাদ মজহার : আমি মানুষের অধিকার, নাগরিক অধিকার নিয়ে কথা বলি। ধর্মীয় অধিকার নিয়ে কথা বলা আমার কাজ। মাজার ভাঙা নিয়ে ডেফিনিটলি কথা বলেছি। যারা মাজার ভেঙেছে, তাদের ধরেনি, ধরেছে চিন্ময়কে ( চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী) । এটা আমি বলেছি।
ডয়চে ভেলে : নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় লালন ভক্তদের অনুষ্ঠান করতে দিলো না...
ফরহাদ মজহার: হ্যাঁ, সেটা তো হয়েছে। সেটাও আমি বলেছি। তাহলে যারা লালনভক্তদের অনুষ্ঠান করতে দিলো না, যারা মাজারে হামলা করলো, তাদের সরকার গ্রেপ্তার কেন করল না? সেটা আপনি সরকারকে জিজ্ঞেস করুন। যারা মাজার ভেঙেছে, আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করুন। আমার কথার প্রেক্ষিতে জিজ্ঞেস করুন, যারা মাজার ভেঙেছে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হলো না।
ডয়চে ভেলে : আপনার বিবেচনায় ওই বেঠকটি সর্বধর্ম প্রতিনিধিত্বশীল হয়েছে?
ফরহাদ মজহার : এটার উত্তর আমার দেওয়া ঠিক হবে না, কারণ, তাদের সবার পরিচয়টা আমার সামনে নাই। সরকারের বিচেনায় তারা যা করতে চেয়েছে, তা হলো একটা সম্প্রীতিসভা। সরকারও এটাকে প্রতিনিধিত্বশীল দাবি করে না। এটা একটা প্রক্রিয়া, সেটা সরকার শুরু করেছে। পরে হয়ত তারা আরো অনেকের সাথে কথা বলবে। ভারতের যে অত্যন্ত কুৎসিত প্রচারণা, সেটাকে মোকাবেলা করার জন্য এটা করেছে। যাদেরকে ডেকেছেন, তারা নিজ নিজ ধর্মের দিক থেকে কথা বলেছেন। তারা অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছেন।
ডয়চে ভেলে: এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগটাও আছে। সেটা কি সংখ্যার পার্থক্য? আসলেই কি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে?
ফরহাদ মজহার: অবশ্যই সংখ্যালঘুনির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই। গরিব মানুষের ওপর আঘাত এসেছে। তাদের জায়গা দখল হচ্ছে। আজকে আওয়ামী লীগ নাই। আওয়ামী লীগের কুকাণ্ডগুলো ভিন্ন একটি দল করছে। এই তো কথা। ফলে সংখ্যালঘুনির্যাতন হয়নি এটা তো আমি বলবো না।
ডয়চে ভেলে: সরকারের দিক থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা কি যথেষ্ট? আপনি কী মনে করেন?
ফরহাদ মজহার: দেখুন আমি কথাটা এইভাবে বলি। এই সরকার কিন্তু একটা গণঅভ্যুত্থানের পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে হয়নি। আমরা একটা শিথিল সরকার পেয়েছি। সরকারের শিথিলতার সুযোগে সরকারকে উৎখাতের একটা চেষ্টা হচ্ছে। এই উৎখাতের চেষ্টা যারা করছে, তারা সরকারের বাইরে আছে, প্রশাসনে আছে। সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্য না থাকলে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করার তো যুক্তি নাই। আমি রংপুরে তার বক্তব্য শুনেছি। তার বক্তব্য তো পরিস্কার। তারা তো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। সে কি তার কথা বলবে না? তার কি সভা-সমাবেশ করার অধিকার নাই? আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছি সভা-সমাবেশের অধিকারের জন্য, নাগরিক অধিকারের জন্য।
আমি আপনার সঙ্গে ডিসঅ্যাগ্রি করবো, সেটা তো কথা দিয়ে, লেখা দিয়ে। তাদের সঙ্গে যদি প্রশাসন কথা বলতো... এই যে আছে না হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, তাদের বাইরে এসে সাধুরা একটা সংগঠন করলো। এই যে চিন্ময়ের সংগঠনটি। তারা তো রাজনৈতিক নয়। তারা তো ক্ষমতা দখল করতে আসে নাই।
ডয়চে ভেলে: সরকার বলছে, তারাই তো উসকানি দিচ্ছে। চিন্ময় বাবুকে তো গ্রেপ্তারই করা হলো...
ফরহাদ মজহার: -না, তারা উসকানি দিচ্ছে কীভাবে? চিন্ময় যদি উসকানিমূলক কিছু বলে থাকে, আমরা শুনি... তার তো কথা বলার অধিকার আছে। উসকানি যদি দিয়ে থাকে তারা, আপনি মাজার ভেঙে দিয়েছে যারা, তাদেরকে ধরছেন না, উসকানির জন্য ধরছেন- এগুলো কী?
ডয়চে ভেলে: আপনি বলছেন, প্রত্যেককে শুনতে হবে...
ফরহাদ মজহার: তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের দাবিগুলো শুনতে হবে। তারা আট দফা দাবি দিয়েছে, এর মধ্যে একটি দাবি আছে- তিন দিন ছুটি দিতে হবে। আপনি দুই দিন করেছেন। আরেক দিন বাড়ালে কী এমন সমস্যা? আশ্চর্য ব্যাপার! তাদের দাবির মধ্যে এমন কিছু নাই যা আপনি মানতে পারেন না।
তারা একটা সংখ্যালঘু বোর্ড চেয়েছে। কী সমস্যা? তারা সংস্কৃত এবং পালি পড়তে চায়। এজন্য আলাদা একটা বোর্ড চায়। প্রত্যেকটা জেনুইন দাবি। সেটা নিয়ে আমরা কী করবো সেই আলোচনা করা যায়। একটা কমিশন করে দেন, তারা দেখবে। তাদের তো কোনো পলিটিক্যাল দাবি নাই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন