পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি আমবাগান কাঁচামালের আড়তে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদারদের পদচারণায় মুখর থাকে এ আড়ত। অন্যান্য বছর আগাম শিমের ভরা মৌসুমে আড়তে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হলেও এবার দফায় দফায় প্রবল বষর্ণের ফলে আগাম শিমের ফলন কিছুটা বিপর্যয় হয়েছে। ফলে গত ১০ বছরের মধ্যে এবার শিমের উৎপাদন কম হয়েছে।
মুলাডুলি আমবাগান সবজি আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়তজুড়ে শিম বেচাকেনার মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। শত শত ভ্যান, পাওয়ার ট্রলি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে কৃষকরা শিম আড়তে আনছেন। শিমের ব্যাপারী, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা চাষিদের সঙ্গে শিমের আকারভেদে দরদাম করে কেনাবেচা করছেন। প্রতিটি শিমের আড়তে শিমের স্তূপ। আড়তের মধ্যে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বস্তাজাত করে আড়তের আশপাশে রাখছেন। আড়তে শ্রমিকরা শিম ওজন করে বস্তাজাত করছেন। আবার কেউ শিমের বস্তা ট্রাকে তুলছেন।
আড়ৎদাররা জানান, অন্যান্য বছর এ মৌসুমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ ট্রাক শিম এখান থেকে বাজারজাত হয়। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফলন কম হওয়ায় ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক শিম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে যাচ্ছে। আগাম শিম মৌসুমের শুরুতে এ হাটে ৩৪০ টাকা কেজি দরে শিম বেচাকেনা শুরু হয়। বর্তমান শিমের বাজারদর ৪০-৫০ টাকা। দীর্ঘদিন শিমের দাম ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত স্থির ছিল। এক সপ্তাহ হলো বাজার কমতে শুরু করেছে। এবার কৃষকদের শিমের ফলন কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছেন।
মুলাডুলি কাঁচামাল আড়তের শিম ব্যবসায়ী আবু বক্কর বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার আড়তে শিমের আমদানি কম হলেও এখনো কমপক্ষে ১০০০-১২০০ টন শিম আমদানি হয়। ৫০ থেকে ৬০ ট্রাকবোঝাই শিম দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমদানি কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। কারণ তারা শুরুতেই ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে, এখন বাজারদর ৪০ টাকার কাছাকাছি। অথচ অন্যান্য বছর এ সময় শিমের দাম থাকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজি।
মুলাডুলি কাঁচামাল আড়তের প্রতিষ্ঠাতা আলম ভান্ডারীর ছেলে ও আলম ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী সুজন শেখ বলেন, এবছর ঈশ্বরদীতে শিমের উৎপাদন কম হলেও প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখ টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে। দুইদিন ধরে শিমের দাম প্রায় ৪০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এ আড়তে কমপক্ষে ১২০০ টন শিম আমদানি হয়। সে হিসাবে প্রায় দেড় কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মৌসুমের শুরুতে আগাম শিম চাষিরা বাজারজাত করতে শুরু করেছিলেন। ফলে শুরুতেই তারা ২৫০ টাকা কেজি দরে দাম পেয়েছেন। এখনো মোটামুটি ভালো দামে শিম বিক্রি হচ্ছে। মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে শিমের ক্ষতি হলেও কৃষকরা এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার শিমের বাজারদর বেশি পাওয়ায় আমাদের কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন