জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ভূগর্ভস্থ স্বাদু পানির স্তর নেমে যাওয়া, লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট উত্তরণে সময়ের সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের ধরন বদলে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ, সোলার পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এক হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোকিছুতেই এ সংকটের সুরাহা হয়নি।
বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার ৩৬১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় ১৪ হাজার ১২৬টি। পিএসএফ স্থাপন করা হয় ২ হাজার ৭৯৯টি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাটের লবণাক্ত এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পুকুর পাড়ে তৈরি করা হয় পিএসএফ। কিন্তু তদারকির অভাবে সেগুলোর অধিকাংশই অকেজো হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ওইসব এলাকার মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন। এতে প্রতিটি পরিবারে পেটের পীড়াসহ রোগবালাই দেখা দিচ্ছে।
সরকারি হিসাবে, জেলায় স্থাপন করা ২ হাজার ৭৯৯টি পিএসএফের মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪৭৩টি। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এই তথ্যের মিল নেই। জেলায় সামান্য কিছু পিএসএফ এখন চালু থাকলেও অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে অকেজো রয়েছে। কোথাও কোথা পিএসএফের ভেতর বড় বড় গাছ জন্ম নিয়েছে। কোথাও কোথাও এসব পিএসএফের পাশে নতুন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে তৈরি করা পানির ফিল্টারগুলোও জনসচেতনতার অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে নিরুপায় হয়ে পুকুরের অস্বাস্থ্যকর পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। পুকুরের পানি ভ্যানগাড়িতে করে সরবরাহও করা হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে।
রামপাল এলাকার ফুলপুকুরে পানি নিতে আসা শিবানি রানী জানান, এই পুকুরই এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা। প্রায় এক কিলোমিটার দূরের এই পুকুর থেকে পানি নিয়ে তারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। এটা অনেক কষ্টের। পানির সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
মোরেলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটি এলাকার বাসিন্দা ডা. মিজানুর রহমান ডিয়ার বলেন, ‘দৈবজ্ঞহাটি কলেজ পুকুরে স্থাপন করা সরকারি পিএসএফ’টি এখন ভেঙে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তাই পানির ব্যাপক সংকট রয়েছে। এজন্য এই এলাকার অনেক লোক প্রায়ই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।’
রামপালের পরিবেশবাদী নেতা এমএ সবুর রানা বলেন, ‘যথাযথ সমীক্ষা না করে, বিগত সরকারের নেওয়া পিএসএফ প্রকল্প মুখথুবড়ে পড়েছে। হাতেগোনা দুই একটি ছাড়া বেশির ভাগ পিএসএফ ও পানি শোধনাগার বন্ধ হয়ে গেছে। স্থায়ীভাবে খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, ‘সরকারিভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পর স্থানীয়রা এগুলো তত্ত্বাবধান করেন। তারা এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।’ তবে তিনি দাবি করেন বেশির ভাগ পিএসএফ এখনও চালু আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন