চট্টগ্রাম বন্দরের ভিতরে আমদানি কনটেইনার খুলে আর পণ্য ডেলিভারি দিতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। সরাসরি (অনচেসিস) আমদানিকারকের চত্বর বা বেসরকারি ডিপোতে শতভাগ কনটেইনার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কনটেইনার জট থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি মিলবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবহারকারীদের (স্টেকহোল্ডার) অনেকে।
এ ছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি ও পরিবহনশ্রমিক বন্দরের ভিতরে প্রবেশের ফলে যে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, তা থেকে রেহাই মিলবে। বাড়বে হ্যান্ডলিং সক্ষমতা। ভিড়তে পারবে এখনকার চেয়ে আরও বেশি জাহাজ। বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়েই বর্তমানের তুলনায় আরও ৩০-৪০ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বন্দরগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর। প্রসঙ্গত, গত বছর ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় ৬৭তম।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, সব এফসিএল (ফুল লোডেড) কনটেইনার বন্দরের ভিতরে খুলে পণ্য খালাসের পরিবর্তে বেসরকারি ডিপো অথবা আমদানিকারকের চত্বরে খালাসের অনুমতির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান গত ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলেন। তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর-সংশ্লিষ্টরা জানান, এফসিএল ও এলসিএল এই দুই ধরনের কনটেইনারে পণ্য আসে। সাধারণত এফসিএলে একজন আমদানিকারকের পণ্য থাকে। আর এলসিএলে থাকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য। এলসিএল কনটেইনারের সংখ্যা ৪-৫ শতাংশ যা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বন্দরের বাইরে নিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হয়। বাকি সবই এফসিএল কনটেইনার যার ২০ শতাংশ সরাসরি চলে যায় বন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা ২১টি বেসরকারি ডিপোতে। ১০ শতাংশ ডেলিভারি দেওয়া হয় আমদানিকারকের কারখানা বা গুদামে। বাকি ৭০ শতাংশ এফসিএল বন্দরের ভিতরে খুলে পণ্য বের করে ট্রাক বা কাভার্ড ভানে বোঝাই করে নিয়ে যান আমদানিকারকরা যা সেকেলে পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর কোনো উন্নত বন্দরে এভাবে ইয়ার্ড থেকে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার নিয়ম নেই। উন্নত বন্দরগুলোতে ৫ মিনিটের মধ্যে কনটেইনার বন্দর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ভেরিফিকেশনও করা হয় বন্দরের বাইরে।
ডেলিভারি কার্যক্রম বাইরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকেই। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব আমদানি কনটেইনার ডিপো বা আমদানিকারকের চত্বরে ডেলিভারি দেওয়ার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এর ফলে বন্দরের ভিতরে প্রচুর জায়গা থাকবে। এখনকার চেয়ে আরও বেশি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। কার্গো ও কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং বাড়বে। একটি জাহাজ পণ্য খালাস করে আবার রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দর ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। তখন ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ ছেড়ে যেতে পারবে। পণ্য আমদানি খরচও কমে আসবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন