রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার রায় পেতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করেন তার পরিবার।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মামলাটি রায়ের তারিখ বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় তারা ‘হতাশ হয়ে পড়েছেন’। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন দিলীপ অধিকারী।
অরিত্রীর বাবা বলেন, মেয়ে হারানোর কষ্ট নিয়ে ছয়টি বছর কাটালাম। বিচার চাইতে গিয়ে নিজের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ন্যায়বিচার পেলাম না। বারবার রায়ের তারিখ পড়লেও অদৃশ্য কারণে তা ঘোষণা করা হলো না; কিন্তু কেন রায় দিল না, এখন আমার মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার বিচার পাব কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছি। তবে যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমি বিচার চাইতেই থাকব।
তিনি আরও বলেন, আমার আদরের সন্তান অরিত্রী ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। স্কুলের শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনা, শাখাপ্রধান জিনাত আক্তার, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌস আমাদের সামনে অরিত্রীর সঙ্গে নির্মম ও নির্দয় আচরণ করেন এবং বারবার টিসি দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, এতে অরিত্রী মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় করা মামলায় দুই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।
এর আগে অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার রায় পিছিয়েছে সাতবার। এর আগে গত ২৫ জুলাই ছয়বার রায়ের তারিখ পেছানোর পর পুনঃতদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মৌখিক নির্দেশ দেন দ্বাদশ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রথমবার এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে। সেদিন রায় ঘোষণার না করে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন; কিন্তু ওই দিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা পিছিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি ঠিক করা হয়; কিন্তু ওই দিনও একই কারণে তা পিছিয়ে ৩ মার্চ ঠিক করা হয়।
পরের দফায় রায় পিছিয়ে তারিখ পড়ে ৯ এপ্রিল। তারপর ৩ জুন নতুন তারিখ রাখা হয়েছিল। এরপর সর্বশেষ ২৫ জুলাইও রায় হয়নি। মামলার দুই আসামি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তখনকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস এবং শাখাপ্রধান জিনাত আক্তার জামিনে রয়েছেন। এদিন তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হলে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারার এ মামলার তাদের সর্বোচ্চ দশ বছর কারাদণ্ড, সঙ্গে অর্থদণ্ড হতে পারে।
২০১৮ সালে ৩ ডিসেম্বর শান্তিনগরের বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী (১৫)। তার আগের দিন পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপর অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নেওয়া হয় স্কুলে। তখন অরিত্রীর সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিনই আত্মহত্যা করে অরিত্রী। অরিত্রীর আত্মহত্যার পর তার সহপাঠীরা বিক্ষোভে নামে।
উল্লেখ্য, ৪ ডিসেম্বর তার বাবা দিলীপ অধিকারী আত্মহননে প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন