গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বাংলোবাড়ি। প্রতিবছর দুই বোন সময় কাটাতে আসতেন এখানে। চলতি বছরও তারা বাংলোতে আসেন। এছাড়াও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জরুরি সভা করতেন। বাংলোটি ডুপ্লেক্স, শান বাঁধানো পুকুরঘাট, বাগানসহ নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে এক সময় সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল কল্পনাতীত। বিশাল বাংলোবাড়িটি এখন শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরেই বাংলোবাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। বাংলোতে ঢুকে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেয় ফাইলপত্রে। লুট করে নেয় টিভি, ফ্যান, এসি, ফ্রিজ, টাকাসহ আসবাবপত্র। নষ্ট করে সব ছোটখাটো স্থাপনা। এরপর থেকে এটি অরক্ষিত রয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, বাংলোর দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ছোট মনিহারি দোকান। এছাড়াও গেটের পাশে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে সেলুন। কোনো গেট ও পাহারাদার নেই। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারিকেল গাছ থেকে কয়েকজন কিশোর ডাব পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরেকটু সামনে বিশাল বাংলোবাড়িটির দেখা মিলল। বাংলোটি সম্পূর্ণ পোড়া। দরজা জানালাসহ কোনো আসবাবপত্র নেই। প্রতিটি কক্ষে পোড়া চিহ্ন। নিচ তলায় কয়েকজন কিশোর মোবাইলে গেমস খেলছে। দোতলায় কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। ছাদে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন তরুণ খাবার রান্না করছেন। তারা বলেন, আমরা ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে এসেছি। খেলোয়াড়রা খেলছে, কয়েকজন রান্না করছি। খেলা শেষে খাওয়া হবে।
বাড়িটির সামনে বিশালাকৃতির শান বাঁধানো পুকুর। কয়েকজন পুকুরে নেমে সাঁতার কাটছেন। পুকুরের পশ্চিম পাশে মাঠে যুবকরা ক্রিকেট খেলছেন। পূর্বপাশে দলে দলে ভাগ হয়ে খেলছেন ফুটবল। ফুটবল খেলতে আসা তরুণ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে কারখানায় ঘেরা ও তেমন কোনো মাঠ নেই। এখানে অনেক জায়গা এবং সুন্দর। এজন্য এখানে খেলতে আসি। অনেকেই আসে, কেউ খেলাধুলা করে, কেউ আড্ডা দেয়।
এলাকাবাসী জানান, বাংলোবাড়িতে শেখ রেহানা, শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীরা আসতেন। মাঝেমধ্যেই রাতে জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়ি ঢুকত। তখন বাংলোর চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকত। কখনো ভোরেই গাড়িগুলো চলে যেত, কখনও দু-এক দিন থাকতেন তারা। সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। মৌচাক এলাকার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, দূর-দূরান্ত থেকেও অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন