দেশে কোনও উড়োজাহাজে ‘মালিকবিহীন স্বর্ণ’ পাওয়া গেলে এখন থেকে এয়ারলাইনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। বাংলাদেশে চলাচলকারী সব এয়ারলাইনকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের হেল্প ডেস্ক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে এয়ারলাইনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন।
চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমানের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবতরণ করা বিভিন্ন উড়োজাহাজের মাধ্যমে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে আনীত স্বর্ণ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে আটককৃত স্বর্ণের বিষয়ে কাস্টমস আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে (যদি থাকে) ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিবেচনায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উড়োজাহাজগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন ছাড় দেওয়া হয়।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘চোরাচালানকৃত স্বর্ণ অনেক ক্ষেত্রেই উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পয়েন্টে (যেমন- সিটের নিচে, বাথরুমে, বাথরুমের পাইপের নিচে, ক্যাটারিং এরিয়া, লাগেজ সংরক্ষণের স্থান ইত্যাদি) এমন অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় থাকে যে, সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে এ ধরনের অপতৎপরতা সংঘটন সম্ভব নয়। এর দায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিশ্বাস করে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন ও কঠোর হলে এ ধরনের স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এমন অবস্থায় উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে এ ধরনের চোরাচালান যেন সংঘটিত হতে না পারে, সে লক্ষ্যে ‘সুস্পষ্ট, সুদৃঢ় এবং দৃশ্যমান’ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এরপর এ ধরনের চোরাচালানের ঘটনা সংঘটিত হলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুযায়ী— মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উড়োজাহাজের বিভিন্ন ফ্লাইটে স্বর্ণ আনার অভিযোগ অনেক পুরনো। এছাড়াও উড়োজাহাজের অনেক স্পর্শকাতর জায়গা থেকেও স্বর্ণ উদ্ধারের নজির রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব স্থানে উড়োজাহাজের কর্মী ছাড়া কোনোভাবেই সেখানে স্বর্ণ রাখা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে উড়োজাহাজের কর্মীরাও স্বর্ণপাচারের সঙ্গে যে জড়িত, সেটিই প্রতিয়মান হয়। বর্তমানে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছি আমরা। আর তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
শুল্ক গোয়েন্দার ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে মালিকবিহীন স্বর্ণ পাওয়া গেলে, আর সেটি যদি স্পর্শকাতর স্থান হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই ওই এয়ারলাইন্সসহ পুরো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে আগের মতো আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন