বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সমন্বয়কদের যাওয়া নিয়ে এখন নানামুখী বিতর্ক চলছে। আমি উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট সেনা সদরে অতঃপর বঙ্গভবনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেনা সদরে আসিফ নজরুল স্যারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কীভাবে সরকার গঠন হতে পারে তার কোনো হোমওয়ার্ক করেছেন কিনা। উনার উত্তর ছিল গত কয়েকদিন পালিয়ে কাটিয়েছেন, হোমওয়ার্ক করবো কখন। উনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কথাবলার ধরণ যা কিছু দেখেছি তাতে আমি বিশ্বাস করি উনি সত্য কথাই বলেছিলেন।
সেনা প্রধান বক্তব্য শেষে যখন সবাইকে তার সঙ্গে বঙ্গভবনে যাওয়ার অনুরোধ করলেন তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই প্রথমে যেতে চাননি। সেনাপ্রধান দেশের ক্রান্তিলগ্নে সবার সহযোগিতা চেয়ে বারবার রিকুয়েস্ট করছিলেন অপরদিকে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে বারবার বলছিলেন যে আমাদের যাওয়া উচিৎ। পরে সবাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেনা সদরে গিয়েছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জামায়াতের ডা. শফিকুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় পার্টির জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইসলামি আন্দোলনের সৈয়দ ফয়জুল করিম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফায়জুল্লাহ, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি ও ড. আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল স্যার ও জোনায়েদ সাকিকে আর্মির জীপ গাড়িতে উঠিয়েছে আর বাকি নেতৃবৃন্দকে মিনি কোস্টারে নিয়েছে। কোস্টারের গ্লাস সাদা হওয়াও জি এম কাদের এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে বের হওয়ার পর থেকে ভয়ে আতঙ্কে পর্দায় নিজেদেরকে ঢেকে রেখেছিলেন। আমরা ভয় পাচ্ছিলাম জনতা জি এম কাদেরকে দেখে ফেলে কিনা।
যাওয়ার সময় চরমোনাই এর মাওলানা ফয়জুল করীম আর আমি পাশাপাশি বসেছিলাম, কী ধরনের সরকার হতে পারে এ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল, উনি বারবার বলছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে সামরিক সরকার ভালো এবং আমাদের সেভাবেই কথা বলা উচিৎ।
ইসলামি দলগুলোর আপত্তির কারণে ইসলামি ঐক্য জোটের মাওলানা ফায়জুল্লাহর আর বঙ্গভবনে যাওয়া হয়নি। বিএনপি জামায়াতসহ অন্য দলগুলো আপত্তি করলে হয়ত জাতীয় পার্টিও বাদ পড়ত। মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল ইসলামসহ অন্য যারা বঙ্গভবনে গিয়েছিলন তারা সরাসরি সেখানে গিয়েছিলন।
বঙ্গভবনে যাওয়ার পর জুনায়েদ সাকি ডিউটিরত অফিসারদেরকে বলেন, তিনজন সমন্বয়ক গেটে আসবে তাদেরকে ভেতরে আনার ব্যবস্থা করতে এবং তারা ভেতরে আসার আগ পর্যন্ত বারবার তিনি দরবার হল থেকে উঠে যাচ্ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট আর্মি অফিসারকে জিজ্ঞেস করছিলেন কেউ আনতে গেছেন কিনা। সমন্বয়ক হিসাবে যারা বঙ্গভবনে গিয়েছিল তারা ছিল জোনায়েদ সাকির চয়েস। তাঁরা আসলে সমন্বয়ক কিনা তাও আমরা জানিনা এবং আসিফ নজরুল স্যার তাদের আগে থেকে চিনতেন বলে আমার মনে হয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে জামায়াতের আমীর প্রথমেই বলেন যে যেহেতু ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে সুতরাং তাদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মোটামুটি সবাই এ ব্যাপারে একই সুরে কথা বলেন। শুধুমাত্র চরমোনাই পীর মাওলানা ফয়জুল করীম বলেন যে নিবন্ধিত দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। জিএম কাদের মার্শাল ল জারি করার কথা বলেন। সবার প্রতিবাদের মুখে উনি অবশ্য বলেন যে উনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের কথা বলতে যেয়ে ভুলে মার্শাল ল জারির কথা বলে ফেলেছেন। ছাত্রদের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে সবাই আসিফ নজরুল স্যারের সহযোগিতা নিতে বলেন এবং কেউ কেউ রাতেই সরকার গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। সেখানে আসিফ নজরুল স্যার স্পষ্ট বলেন যে, ১৬৫ জন সমন্বয়ক, তারা নিজেরা আলাপ আলোচনা করবে, সিদ্ধান্ত নেবে এতে তো সময় লাগবে।
এখন বিপ্লবী সরকার না হওয়া, বঙ্গভবনে ভুয়া সমন্বয়ক নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেভাবে এককভাবে আসিফ নজরুলের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে তা বাড়াবাড়ি। ৫ তারিখে ফ্যাসিস্টদের দোসর জি এম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফায়জুল্লাহ গং দের যারা দাওয়াত দিয়েছিল তারা পরিকল্পিতভাবে কাজটা করতে পারে।
তবে আসিফ নজরুল বা বিএনপি-জামায়াত ঐ সময়ে পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছিল এটা আমার মনে হয়নি। হঠাৎ এত বড় পরিবর্তনে হোমওয়ার্ক না থাকায় তাঁরা সেই পরিস্থিতিতে যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছেন।
উল্লেখ্য, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই লেখাটি শেয়ার করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন